ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ব্লকের প্রার্থী, প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি (Former Judge)বি সুদর্শন রেড্ডি সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই নির্বাচন দুই ব্যক্তির মধ্যে লড়াই নয়, বরং দুটি ভিন্ন মতাদর্শের সংঘাত।
তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এনডিএ প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণনকে “আদর্শ আরএসএস ব্যক্তি” হিসেবে উল্লেখ করে নিজেকে “উদার সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক” বলে ঘোষণা করেছেন, যিনি আরএসএস-এর মতাদর্শ থেকে “অনেক দূরে”। এই মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
৭৯ বছর বয়সী রেড্ডি, যিনি ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসর নিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি কেবল আমার এবং রাধাকৃষ্ণনজির মধ্যে প্রতিযোগিতা নয়। এটি দুটি ভিন্ন মতাদর্শের লড়াই। একপক্ষ যিনি আরএসএস-এর প্রতিনিধিত্ব করছেন, আমি সেই মতাদর্শে বিশ্বাস করি না।
আমি মূলত উদার, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক।” তিনি আরও জানান, তিনি সিপি রাধাকৃষ্ণনের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনও শত্রুতা পোষণ করেন না, বরং তাঁর আপত্তি আরএসএস-এর কার্যপ্রণালী নিয়ে। তিনি বলেন, “আমার কোনও মতাদর্শ পছন্দ বা অপছন্দ করার বিষয় নেই।
তবে আরএসএস-এর কার্যপ্রণালীর সঙ্গে আমার গুরুতর মতপার্থক্য রয়েছে, কারণ আমি একজন উদার সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক, যিনি ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরের ভ্রাতৃত্ববোধের মতাদর্শে বিশ্বাসী।”
রেড্ডি আরও বলেন, তিনি এই নির্বাচনকে একটি “শালীন প্রতিযোগিতা” হিসেবে দেখতে চান, যেখানে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা তিক্ততার কোনও স্থান থাকবে না। তিনি বলেন, “আমি চাই এটি সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে শালীন নির্বাচন হোক। কোনও ব্যক্তিগত অভিযোগ বা ব্যক্তির সম্পর্কে মন্তব্য নয়, কারণ যিনি এই উচ্চ সাংবিধানিক পদে আসীন হতে চান, তাঁর উচিত তিনি যা প্রচার করেন, তা নিজে পালন করা।”
তিনি সংসদে বিঘ্ন সৃষ্টিকে গণতন্ত্রের একটি অংশ হিসেবে দেখেন, তবে সতর্ক করে বলেন, এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠলে সমস্যা হতে পারে। তিনি প্রাক্তন বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, “বিঘ্নও একটি বৈধ রাজনৈতিক কার্যকলাপ এবং সংসদীয় প্রথা।”
রেড্ডি সংবিধানের প্রতি তাঁর অটল বিশ্বাসের কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, ভারতের গণতন্ত্র বর্তমানে “চাপের মধ্যে” রয়েছে। তিনি বলেন, “আগে আমরা অর্থনীতির ঘাটতির কথা বলতাম, এখন গণতন্ত্রে ঘাটতি রয়েছে। আমি এটা বলছি না যে ভারত আর গণতান্ত্রিক দেশ নয়, কিন্তু আমরা এখনও সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মধ্যে আছি, যদিও তা চাপের মধ্যে রয়েছে।”
তিনি সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ নিয়ে বিতর্কের বিষয়েও মত প্রকাশ করেন, জানান যে এই শব্দগুলো সংবিধানের মূল ভাবনাকে স্পষ্ট করে। তিনি বলেন, “৪২তম সংশোধনীর সময় এই শব্দগুলো যোগ করা হয়েছিল, এবং পরে জনসংঘ, যারা সরকার গঠন করেছিল, তারাও এটি সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করেছিল। তাই এই বিতর্ক কী উদ্দেশ্যে উস্কে দেওয়া হচ্ছে, তা বোঝা কঠিন।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সালওয়া জুড়ুম রায় নিয়ে সমালোচনার জবাবে রেড্ডি বলেন, “আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি বিতর্কে জড়াতে চাই না। আমি শুধু বলব, তিনি যদি ৪০ পৃষ্ঠার সেই রায় পড়তেন, তাহলে হয়তো এই মন্তব্য করতেন না।” তিনি স্পষ্ট করেন, সালওয়া জুদুম রায় তাঁর নিজের নয়, বরং সুপ্রিম কোর্টের রায়।
রেড্ডি গান্ধী, নেহরু এবং আম্বেদকরের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনার সমালোচনা করে বলেন, “এই তিনজনই ছিলেন মহান গণতান্ত্রিক এবং সংবিধানের নৈতিকতায় বিশ্বাসী। তাঁদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা জাতির স্বার্থের পরিপন্থী।”
তিনি তাঁর প্রার্থিতাকে একটি সম্মান হিসেবে দেখেন, কারণ ইন্ডিয়া জোট ভারতের ৬৩-৬৪% জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি সকল সাংসদদের কাছে তাঁর প্রার্থিতাকে বিবেচনা করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী অপসারণ বিল নিয়ে জেপিসিতে নেই তৃণমূল
এই নির্বাচন, যা ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে, ভারতের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রেড্ডির এই বক্তব্য ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।