ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের পুত্র চৈতন্য বাঘেলকে রায়পুরের একটি বিশেষ প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (Money Laundering) আদালতে হাজির করা হয়েছে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর পাঁচ দিনের হেফাজত শেষ হওয়ার পর তাকে অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জজ (ষষ্ঠ) দমরুধর চৌহানের আদালতে উপস্থাপিত করা হয়।
ইডি’র আইনজীবী সৌরভ কুমার পাণ্ডে জানিয়েছেন, হেফাজতের সময় চৈতন্যকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং নথি ও সাক্ষ্যের মুখোমুখি করা হয়, যেখানে তিনি বেশ কিছু বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন না থাকায় ইডি তাকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর জন্য আদালতের কাছে আবেদন করে। আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করে চৈতন্যকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে।
ইডি’র অভিযোগ, চৈতন্য বাঘেল ছত্তিশগড়ে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সংঘটিত একটি কথিত মদ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে উৎপন্ন ১,০০০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ অর্থের “প্রাপক” ছিলেন। এই কেলেঙ্কারির ফলে রাজ্যের কোষাগারে প্রায় ২,১৬১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ইডি দাবি করেছে। তদন্তে জানা গেছে, চৈতন্য তার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ১৬.৭ কোটি টাকার অবৈধ তহবিল ব্যবহার করেছেন।
ইডি’র রিমান্ড আবেদনে দাবি করা হয়েছে, তিনি দুটি শেল কোম্পানি এবং কম মূল্যায়িত রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের মাধ্যমে এই অর্থ পাচার করেছেন, যার মধ্যে ‘বাঘেল ডেভেলপার্স’-এর অধীনে ‘বিঠল গ্রিন’ নামে একটি প্রকল্পে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এই মামলায় ইডি গত জানুয়ারিতে প্রাক্তন মন্ত্রী কাওয়াসি লাখমা, রায়পুরের প্রাক্তন মেয়র আইজাজ ধেবারের ভাই আনোয়ার ধেবার, প্রাক্তন আইএএস অফিসার অনিল তুতেজা, ইন্ডিয়ান টেলিকম সার্ভিস (আইটিএস) অফিসার অরুণপতি ত্রিপাঠী সহ আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছিল।
ইডি’র মতে, এই কেলেঙ্কারি ভূপেশ বাঘেলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের আমলে (২০১৯-২০২২) ঘটেছিল। ছত্তিশগড়ের ইকোনমিক অফেন্সেস উইং/অ্যান্টি-করাপশন ব্যুরো (ইওডব্লিউ/এসিবি) ২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারি একটি এফআইআর দায়ের করে, যাতে ৭০ জন ব্যক্তি ও কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়। ইডি’র অভিযোগ, অবৈধ মদ বিক্রির মাধ্যমে উৎপন্ন কমিশন “রাজ্যের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নির্বাহীদের নির্দেশে” বিতরণ করা হয়েছিল।
চৈতন্যের আইনজীবী ফয়সাল রিজভি অভিযোগ করেছেন, ইডি পিএমএলএ-এর ধারা ৫০-এর অধীনে সমন জারি না করে এবং তাকে শোনার সুযোগ না দিয়ে গ্রেফতার করেছে, যা পদ্ধতিগত লঙ্ঘন। তিনি আরও দাবি করেন, এই মামলায় ২০২২ সাল থেকে চৈতন্যের নাম কোনও অভিযোগপত্রে উল্লেখ ছিল না।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এই গ্রেফতারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবি করেন, তিনি রায়গড় জেলায় অদানি গোষ্ঠীর কয়লা খনির জন্য “অবৈধ গাছ কাটার” বিষয়ে বিধানসভায় আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
এই গ্রেফতার সেই বিষয় থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি বিচারব্যবস্থার উপর ভরসা রাখি এবং সহযোগিতা করব, কিন্তু এটি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার।”
কংগ্রেস দল এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে ২২ জুলাই রাজ্যজুড়ে ‘চক্কা জ্যাম’ (রাস্তা অবরোধ) কর্মসূচি পালন করে। দলের নেতারা, যার মধ্যে রয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি দীপক বৈজ এবং বিরোধী দলের নেতা চরণ দাস মাহান্ত, এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
তবে, ছত্তিশগড়ের বিজেপি সভাপতি কিরণ সিং দেও এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “যদি কেউ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকে, তবে তদন্তকারী সংস্থাগুলি তাদের কর্তব্য পালন করবে।”
পরমাণু হামলার ভয় নেই, বিশ্বজুড়ে তৈরি হচ্ছে ১০০০টি নিরাপদ ঘর, কত খরচ হবে?
এই মামলাটি ছত্তিশগড়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করেছে। চৈতন্য বাঘেল বর্তমানে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন, এবং ছত্তিশগড় হাইকোর্টে তার জামিনের আবেদনের শুনানি আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে।