পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরায় (Debra) বিজেপির ডাকা ছয় ঘণ্টার বনধে কার্যত কোনো প্রভাব পড়ল না। শনিবার সকাল থেকেই জেলা জুড়ে দোকানপাট খোলা ছিল, রাস্তায় স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল করেছে, আর সাধারণ মানুষও তাদের নিত্যদিনের কাজকর্মে ব্যস্ত ছিলেন। আবগারি দপ্তরের পুলিশের হেফাজতে ডাক্তার সরেনের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা বনধের ডাক দিয়েছিল। যদিও সকালেই বনধ কার্যকর হওয়ার আগেই জেলা বিজেপির সভাপতি তন্ময় দাসসহ প্রায় ৩০ জন কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এর ফলে ডেবরা শহর জুড়ে বনধ কার্যত ব্যর্থ হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনধ সফল করার জন্য বিজেপি কর্মীরা সকাল থেকেই রাস্তায় নামলেও বড়সড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এদিন সকাল থেকেই ডেবরার প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে হাট-বাজার সব কিছু খোলা ছিল। মানুষজন রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করেছেন। এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডেবরার গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও বাজারে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। পুলিশের কড়া নজরদারিতে গোটা এলাকা কার্যত শান্তিপূর্ণ ছিল।
এদিকে বনধের বিরোধিতায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সকাল থেকেই তৃণমূল কর্মীরা রাস্তায় মিছিল করে বনধের প্রতিবাদ জানিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী শান্তি টুডু বলেন, “আমরা ডাক্তার সরেনের পরিবারের পাশে আছি। ডেবরার মানুষ কর্মনাশা বনধকে সমর্থন করেনি। মানুষকে বিভ্রান্ত করা ও অশান্তি সৃষ্টি করার রাজনীতি কখনও সফল হয় না। আজ তার প্রমাণ পাওয়া গেল।”
তবে বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ডেবরার গ্রামাঞ্চলে বনধ সফল হয়েছে। ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার এসটি মোর্চার সভাপতি সুকেশ সরেন বলেন, “গ্রামাঞ্চলে মানুষ পুলিশের হেফাজতে হওয়া মৃত্যুর প্রতিবাদে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সরকার ঘটনার সত্য সামনে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষ ক্ষুব্ধ।”
এই ঘটনার জেরে ডেবরার রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। একদিকে বিজেপি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বনধ রাজনীতিকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং কোনো রকম অশান্তি ছড়াতে দেওয়া হবে না।
ডেবরার ব্যবসায়ী মহল বনধকে কার্যত উপেক্ষা করেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, “পুজো আসন্ন, বাজারে ভিড় বাড়ছে। এমন সময় বনধ ডাকলে ক্ষতি হয় আমাদেরই।” সাধারণ মানুষও জানিয়েছেন, “এই ধরনের রাজনৈতিক বনধ এখন আর কেউ গুরুত্ব দেয় না। আমরা নিজেদের কাজেই ব্যস্ত।”
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে আবগারি দপ্তরের হেফাজতে ডাক্তার সরেনের মৃত্যু ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপি এই ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে জোরালো আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তবে শনিবারের বনধ সেই আন্দোলনকে বড়সড় জনসমর্থন দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মোটের উপর, শনিবারের ছয় ঘণ্টার বনধে ডেবরার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় অক্ষুণ্ণ থেকেছে। শহর ও বাজার এলাকা সচল থাকলেও গ্রামাঞ্চলে বনধের আংশিক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। বনধের দিনটি রাজনৈতিক তরজা এবং রাস্তায় পুলিশি সতর্কতায় কেটেছে।