পুজোর মুখে ফের অনিশ্চয়তার ছায়া মৃৎশিল্পীদের (Kumartuli Potters) জীবনে। রাজ্যে নিম্নচাপজনিত বৃষ্টির কারণে মৃৎশিল্পের আঁতুড়ঘর কুমারটুলিতে শুরু হয়েছে চরম সমস্যার মুখোমুখি হওয়া। প্রতিবার দুর্গাপুজোর আগেই এই সময়টায় কুমারটুলি থাকে জমজমাট, হাতের মাটির গন্ধে ভরে থাকে গোটা এলাকা। কিন্তু এবছর টানা বৃষ্টি ও নিম্নচাপের প্রভাবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
কুমারটুলির মৃৎশিল্পীরা জানিয়েছেন, লাগাতার বৃষ্টি মূর্তি তৈরির কাজকে একেবারে শিকেয় তুলেছে। প্রতিমার ফিনিশিং টাচ দেওয়ার সময়টাতেই এমন আবহাওয়া দেখা দেওয়ায় তাঁরা কার্যত দিশেহারা। প্রতিমার মাটি শুকোতে সময় লাগছে অনেক বেশি, রং করতেও সমস্যা হচ্ছে। কুমারটুলির শিল্পী প্রবীণ পাল বলেন, “প্রতিবারই এই সময়টা আমাদের সবচেয়ে ব্যস্ততার। কিন্তু এবার আবহাওয়ার জন্য আমরা ভীষণ সমস্যায়। অর্ডার নেওয়া আছে, কিন্তু প্রতিমা ঠিক সময়ে দিতে পারব কিনা তা নিয়েই চিন্তায় রয়েছি।”
কুমারটুলির প্রায় প্রতিটি কারখানায়ই এখন মূর্তি তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। গ্রাহকেরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিমার অর্ডার দিয়েছেন, বিদেশেও রপ্তানি হয় কুমারটুলির প্রতিমা। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ডেলিভারি সময়মতো হবে কিনা, তা নিয়ে আতঙ্কিত সবাই। বৃষ্টি শুধু প্রতিমার শুকনো প্রক্রিয়াকেই ধীর করছে না, সাথে কাঠামোতেও দেখা দিচ্ছে ফাটল ও স্যাঁতসেঁতে ভাব।
শিল্পী উজ্জ্বল চক্রবর্তী বলেন, “আমরা এই সময়টায় রাতদিন এক করে কাজ করি। কিন্তু টানা বৃষ্টি আমাদের দম বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রাহকরা ফোন করে প্রতিমার অবস্থা জানতে চাইছেন, আমরাও ঠিকমতো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। ফলে অর্থনৈতিক চাপও বাড়ছে।”
অন্যদিকে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি চলতে পারে। যা মৃৎশিল্পীদের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। রাজ্যের জনপ্রিয় দুর্গাপুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে প্রতিমা ডেলিভারির জন্য কিছুটা সময় দিচ্ছেন। তবে বিদেশে প্রতিমা পাঠানোর জন্য সময়সূচি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি হওয়ায় রপ্তানি প্রক্রিয়ায়ও চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
কুমারটুলির ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতি বছরই পুজোর আগে আবহাওয়ার এমন আচরণ তাঁদের ব্যবসায় প্রভাব ফেলে। তাই প্রশাসনের কাছে তাঁরা অনুরোধ করছেন, কুমারটুলির মতো মৃৎশিল্পের কেন্দ্রগুলিকে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য স্থায়ী পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করা হোক। শিল্পীরা জানান, অস্থায়ী শেড বানানো হলেও তাতে তেমন কাজের সুবিধা হয় না। স্থায়ী ওয়াটারপ্রুফ স্ট্রাকচার তৈরি হলে প্রতিমা তৈরির কাজ অনেকটাই সহজ হবে।
শিল্পী সমাজের বক্তব্য, কুমারটুলি শুধু ব্যবসার জায়গা নয়, বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অমূল্য অংশ। তাই আবহাওয়ার প্রতিকূলতা রুখে এই ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। দুর্গাপুজোর আগে এই অনিশ্চয়তার সঙ্কট তাঁদের মনে উদ্বেগ বাড়ালেও তাঁরা এখনও আশাবাদী, পুজোর আগেই পরিস্থিতি কিছুটা সামলানো যাবে।
দুর্গাপুজোর আগের এই দুঃসময় আবারও প্রমাণ করে দিয়েছে যে বাংলার মৃৎশিল্পীরা আবহাওয়ার উপর কতটা নির্ভরশীল। প্রকৃতির সাথে লড়াই করেই তাঁরা বছরের সেরা উৎসবের আনন্দ মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন।