পূর্ব ভারতের চিকিৎসা পরিষেবার ইতিহাসে নতুন মাইলফলক। কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে এবার গড়ে উঠতে চলেছে পূর্ব ভারতের প্রথম হাড়ের ব্যাঙ্ক (Bone Bank)। এই হাড়ের ব্যাঙ্ক চালু হলে দুর্ঘটনা, ক্যান্সার বা সংক্রমণজনিত হাড়ের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য নতুন আশার আলো খুলে যাবে বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, নীতিগত অনুমোদন ইতিমধ্যেই মিলেছে এবং খুব শীঘ্রই এই ব্যাঙ্ক চালু করার কাজ শুরু হবে।
কেন প্রয়োজন হাড়ের ব্যাঙ্ক?
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় গুরুতর দুর্ঘটনায় রোগীর হাত-পা বা শরীরের অন্য কোনো অংশের হাড় ভেঙে যায়। একইভাবে, ক্যান্সার বা সংক্রমণের কারণে অনেক রোগীর হাড় অপসারণ করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংরক্ষিত হাড় প্রতিস্থাপন করলে রোগীর চিকিৎসা ও পুনর্বাসন অনেক দ্রুত হয়। কলকাতায় এই হাড়ের ব্যাঙ্ক চালু হলে শুধুমাত্র শহর নয়, সমগ্র পূর্ব ভারত এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষও এই পরিষেবা থেকে উপকৃত হবেন।
শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে নতুন দিগন্ত
কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সরকারি হাসপাতাল শম্ভুনাথ পণ্ডিতে দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চমানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। হাসপাতালের এসএসকেম (SSKM) ও বাপি জি হাসপাতালের অ্যানেক্স হিসেবে নতুন এই হাড়ের ব্যাঙ্ক চালুর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বর্তমান চিকিৎসা পরিকাঠামো, দক্ষ চিকিৎসক দল এবং বিদ্যমান লোকবল ব্যবহার করেই এই ব্যাঙ্ক তৈরি করা হবে। এতে রাজ্যের স্বাস্থ্য বাজেটে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে আধুনিক চিকিৎসার সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
চিকিৎসা সুবিধা এবং প্রভাব
এই ব্যাঙ্ক চালু হলে মূলত দুটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে:
দুর্ঘটনাজনিত হাড় প্রতিস্থাপন: সড়ক দুর্ঘটনা বা আঘাতের ফলে ভেঙে যাওয়া হাড়ের চিকিৎসায় সংরক্ষিত হাড় ব্যবহার করে দ্রুত প্রতিস্থাপন করা যাবে।
চিকিৎসা-জনিত পুনর্বাসন: ক্যান্সার বা সংক্রমণের কারণে কেটে ফেলা হাড়ের পরিবর্তে সংরক্ষিত হাড় বসিয়ে রোগীকে পুনর্বাসন দেওয়া যাবে।
এছাড়াও, হাড়ের প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায় রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সময় অনেকাংশে কমে আসবে। অনেক ক্ষেত্রে আগে চিকিৎসার জন্য অন্যান্য রাজ্য বা বিদেশে যেতে হতো, যা এবার আর প্রয়োজন হবে না।
হাড়ের ব্যাঙ্ক চালু হওয়ার ফলে কলকাতা শুধু রাজ্য নয়, গোটা পূর্ব ভারতের চিকিৎসা পরিষেবার মান বাড়াবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে এই ব্যাঙ্ক মেডিক্যাল গবেষণার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একাধিক সার্জারি ও ট্রমা কেয়ার বিভাগে এই ব্যাঙ্কের হাড় সংরক্ষণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনের সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
শহরের বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জনদের মতে, হাড়ের ব্যাঙ্ক থাকলে ট্রমা কেয়ার ইউনিটে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যাবে। অনেক সময় রোগীর নিজের শরীর থেকে হাড় নিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয় না, তখন হাড়ের ব্যাঙ্ক একটি জীবনরক্ষাকারী বিকল্প হতে পারে।
সব মিলিয়ে, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে পূর্ব ভারতের প্রথম হাড়ের ব্যাঙ্ক চালু হলে, এটি নিঃসন্দেহে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পরিষেবায় নতুন যুগের সূচনা করবে।