শনিবার সাত সকালে আম্বানির বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি

শনিবার ভোরবেলা দেশের অন্যতম শিল্পপতি অনিল আম্বানির (Anil Ambani)মুম্বইয়ের বাড়িতে সিবিআইয়ের হানা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল শিল্প ও আর্থিক দুনিয়ায়। সকাল ঠিক সাতটা নাগাদ দক্ষিণ মুম্বইয়ের…

anil ambani CBI raid

শনিবার ভোরবেলা দেশের অন্যতম শিল্পপতি অনিল আম্বানির (Anil Ambani)মুম্বইয়ের বাড়িতে সিবিআইয়ের হানা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল শিল্প ও আর্থিক দুনিয়ায়। সকাল ঠিক সাতটা নাগাদ দক্ষিণ মুম্বইয়ের সি-উইন্ড, কাফে প্যারেডে অবস্থিত আম্বানির বাসভবনে ঢুকে পড়েন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অন্তত সাত থেকে আট জন আধিকারিক। শুরু হয় দীর্ঘ তল্লাশি অভিযান। জানা গিয়েছে, অনিল আম্বানি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়িতেই উপস্থিত ছিলেন সেই সময়।

৩,০৭৩ কোটি টাকার জালিয়াতির মামলা

সিবিআই এই তল্লাশি চালায় এক বিশাল অঙ্কের ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলার সূত্রে। সম্প্রতি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)-র তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে যে অনিল আম্বানির সংস্থা রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্স লিমিটেড (আরকম) ৩,০৭৩ কোটি টাকার প্রতারণা করেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই সিবিআই দিল্লিতে একটি নতুন এফআইআর নথিভুক্ত করে।

   

এসবিআই জানায়, আরকমের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের আগস্ট থেকে মূলধন বকেয়া, সুদ এবং অন্যান্য খরচ বাবদ ব্যাঙ্কের ২,২২৭.৬৪ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৭৮৬.৫২ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি। সব মিলিয়ে এই বিপুল অঙ্ককেই প্রতারণার অভিযোগ হিসেবে ধরা হয়েছে।

অভিযোগের ইতিহাস

এই প্রথম নয়, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসেই এসবিআই আরকম ও অনিল আম্বানিকে ‘ফ্রড’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি সিবিআইয়ের কাছে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি দিল্লি হাইকোর্ট ‘স্টেটাস কু’ জারি করায় তদন্তে অস্থায়ী জট পড়ে।

২০২৩ সালের ২৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, কোনো সংস্থাকে ‘ফ্রড’ ঘোষণা করার আগে ঋণগ্রহীতাকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দিতে হবে। সেই নির্দেশ মেনে এসবিআই ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর আরকমকে দেওয়া ‘ফ্রড’ তকমা ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই আরবিআইয়ের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী ফের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং পুনরায় সংস্থাটিকে ‘ফ্রড’ ঘোষণা করা হয়।

এরপর ২০২৫ সালের ১৩ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে আরকম এবং তার প্রোমোটার অনিল আম্বানিকে প্রতারণার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে এসবিআই। জুলাই মাসের ১ তারিখে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে সেই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

দেউলিয়া প্রক্রিয়া ও আইনগত জটিলতা

বর্তমানে আরকম সংস্থা দেউলিয়া প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। ২০২০ সালের ৬ মার্চ ঋণদাতাদের কমিটি একটি রেজোলিউশন প্ল্যান অনুমোদন করেছিল এবং তা মুম্বইয়ের ন্যাশনাল কোম্পানি ল’ ট্রাইব্যুনালে (এনসিএলটি) দাখিল করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। পাশাপাশি অনিল আম্বানির ব্যক্তিগত দেউলিয়া মামলা নিয়েও এনসিএলটিতে শুনানি চলছে।

Advertisements

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অবস্থান

গত শুক্রবার লোকসভায় লিখিত জবাবে অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী জানান, এসবিআই আরকম এবং অনিল আম্বানিকে ‘ফ্রড’ হিসাবে ঘোষণার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেছে এবং বিষয়টি আরবিআইকে জানিয়েছে। সিবিআইয়ের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও জমা দেওয়া হয়েছে। এরপরই সিবিআই তদন্তে নামে এবং শনিবার সকালেই অনিল আম্বানির বাড়িতে তল্লাশি চালায়।

একাধিক মামলায় নজরদারিতে অনিল আম্বানি

এই এক মামলাই নয়, অনিল আম্বানি ও তাঁর বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থা একাধিক আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের নজরে রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, অনিল আম্বানির সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির মোট জালিয়াতির অঙ্ক প্রায় ১৭,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ভারতীয় মহাকাশ স্টেশনের মডেল লঞ্চ করল ISRO, ২০২৮ সালে প্রথম মডিউল

শিল্পমহলে চাঞ্চল্য

অনিল আম্বানি একসময় দেশের টেলিকম খাতে অন্যতম বড় খেলোয়াড় ছিলেন। তবে আর্থিক অনিয়ম, তীব্র ঋণের বোঝা ও প্রতিযোগিতার চাপে আরকম কার্যত ভেঙে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরকমের দেউলিয়া হওয়া শুধু এক সংস্থার পতন নয়, বরং ভারতের টেলিকম খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি। এখন সেই সংস্থাকে কেন্দ্র করে তোলা প্রতারণার অভিযোগে আরও গভীর জটিলতায় জড়াল অনিল আম্বানির ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য।

শনিবার সকালবেলা সিবিআইয়ের হানার ঘটনায় রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গেছে। অনিল আম্বানি ও তাঁর পরিবার এখন সিবিআই তদন্তের সরাসরি মুখোমুখি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শুধু আম্বানির ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নয়, ভারতীয় কর্পোরেট দুনিয়ার ওপরও এর বড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।