নিষিদ্ধ সংগঠন জামাত-এ-ইসলামীর ২১৫টি স্কুলের দায়িত্বে এবার জম্মু-কাশ্মীর সরকার

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu-Kashmir)সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নিষিদ্ধ সংগঠন জামাত-এ-ইসলামী (জেইআই) এবং এর শিক্ষা শাখা ফালাহ-এ-আম ট্রাস্ট (এফএটি)-এর সঙ্গে সংযুক্ত ২১৫টি স্কুলের ব্যবস্থাপনা…

Jammu-Kashmir govt new step

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu-Kashmir)সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নিষিদ্ধ সংগঠন জামাত-এ-ইসলামী (জেইআই) এবং এর শিক্ষা শাখা ফালাহ-এ-আম ট্রাস্ট (এফএটি)-এর সঙ্গে সংযুক্ত ২১৫টি স্কুলের ব্যবস্থাপনা সরকার নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ৫১,০০০-এরও বেশি ছাত্রছাত্রী, তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সরকারের এই পদক্ষেপ কাশ্মীর উপত্যকার ১০টি জেলায় ছড়িয়ে থাকা এই স্কুলগুলির শিক্ষার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে, এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং শিক্ষামন্ত্রী সাকিনা ইতু এই আদেশের শব্দবিন্যাস নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

   

সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলির প্রতিবেদনে এই ২১৫টি স্কুল জামাত-এ-ইসলামী বা ফালাহ-এ-আম ট্রাস্টের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত বলে চিহ্নিত হয়েছে।

এই স্কুলগুলির ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির প্রতিবেদনে এগুলির বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর স্কুল শিক্ষা বিভাগের আদেশ অনুসারে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ডেপুটি কমিশনাররা এই স্কুলগুলির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রস্তাব করবেন। এই প্রক্রিয়া শুক্রবার (২২ আগস্ট, ২০২৫) থেকে শুরু হয়েছে।

জামাত-এ-ইসলামীকে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবৈধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এই সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ এবং জাতীয় বিরোধী কার্যকলাপে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সরকারের দাবি, এই স্কুলগুলি জেইআই-এর প্রভাবে পরিচালিত হচ্ছিল, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উগ্রবাদী মতাদর্শ ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

তবে, শিক্ষামন্ত্রী সাকিনা ইতু জানিয়েছেন, তিনি ডেপুটি কমিশনারদের এই স্কুলগুলির নিয়ন্ত্রণ নিতে আদেশ দেননি। তিনি প্রস্তাব করেছিলেন যে, এই স্কুলগুলির ব্যবস্থাপনা সাময়িকভাবে নিকটবর্তী সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের হাতে দেওয়া হোক, যাতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে কোনও বাধা না পড়ে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে ৫১,৩৬৩ জন শিক্ষার্থী এবং হাজার হাজার শিক্ষকের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই স্কুলগুলি কাশ্মীরের আনন্তনাগ, শোপিয়ান, শ্রীনগর, বারামুল্লা, বান্দিপোরা সহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে।

এই স্কুলগুলিতে ইসলামিক এবং আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে রাজ্যের পাঠ্যক্রম অনুসারে পড়াশোনা হতো। তবে, ২০২২ সাল থেকে এই স্কুলগুলি নতুন ভর্তি এবং নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হচ্ছিল।

Advertisements

শিক্ষামন্ত্রী সাকিনা ইতু জানিয়েছেন, এই স্কুলগুলির নিবন্ধন এবং বোর্ড পরীক্ষার ফর্ম গ্রহণে সমস্যা হচ্ছিল, যার ফলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম এই স্কুলগুলির শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ভবন একই থাকুক।

শুধু ব্যবস্থাপনা সাময়িকভাবে সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের দেওয়া হোক।” তবে, তিনি অভিযোগ করেছেন যে তার আদেশ বিকৃত করা হয়েছে এবং ডেপুটি কমিশনারদের নিয়ন্ত্রণে দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

এই পদক্ষেপ কাশ্মীর উপত্যকায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্সের নেতা সাজাদ লোন এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “২১৫টি স্কুল জোরপূর্বক সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচিত সরকার এই আদেশ জারি করেছে। এটি লজ্জার বিষয়।” তিনি আরও বলেন, ন্যাশনাল কনফারেন্স একসময় অন্যদের বিরুদ্ধে উপদেশ দিত, কিন্তু এখন তারা এই বিতর্কিত পদক্ষেপের সমান অংশীদার।

স্থানীয় জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। অন্যরা এটিকে নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রভাব কমানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন।

‘ভারতের নিজস্ব স্পেস স্টেশন হবে’: স্পেস ডে-তে প্রধানমন্ত্রী জানালেন মহাকাশ স্বপ্নের কথা

তবে, এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। আগামী দিনে এই স্কুলগুলির ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার মান কীভাবে বজায় থাকে, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি রয়েছে।