গুজরাটে তিনগুণ বেশি ভাতা, অথচ বাংলার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা এখনও বঞ্চিত

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের (Anganwadi Workers) মাসিক ভাতা বাড়ছে প্রায় আড়াইগুণ। এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে যাবেন গুজরাটের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়িকারা। বাংলা থাকছে সেই তিমিরেই। পশ্চিমবঙ্গের তুলনায়…

West Bengal Anganwadi Worker

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের (Anganwadi Workers) মাসিক ভাতা বাড়ছে প্রায় আড়াইগুণ। এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে যাবেন গুজরাটের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়িকারা। বাংলা থাকছে সেই তিমিরেই। পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি ভাতা পাবেন গুজরাটের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। সেরাজ্যের হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের মাসিক ভাতা যথাক্রমে ২৪,৮০০ টাকা ও ২০,৩০০ টাকা করার নির্দেশ জারি হয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে এই বাড়তি ভাতা কার্যকর হলে প্রায় এক লক্ষ কর্মী উপকৃত হবেন। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা এখনও মাসে মাত্র ৯,০০০ টাকা পান, যা গুজরাটের তুলনায় অনেক কম। ফলে রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে।

Also Read | অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাসে ২৪,৮০০ টাকা ভাতা দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

   

বাংলার কর্মীদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা
পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্রায় আড়াই লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা কাজ করেন। তাদের মূল দায়িত্ব গর্ভবতী মহিলা, স্তন্যদানকারী মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রাথমিক শিক্ষার সেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু কাজের গুরুত্বের সঙ্গে তাদের ভাতা একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে অভিযোগ। মাসে ৯,০০০ টাকা সম্মানী দিয়ে সংসার চালানো কার্যত অসম্ভব, বিশেষ করে বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির বাজারে। ফলে অনেক কর্মীকে নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে।

গুজরাট হাইকোর্টের রায়ে নতুন আলো
গুজরাট হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছে যে, এত গুরুদায়িত্ব পালন করেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা সম্মানজনক জীবনযাপনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আদালতের ভাষায়, “ন্যূনতম মজুরি নয়, বরং জীবনধারণের উপযুক্ত ভাতা” পাওয়ার অধিকারী তারা। এই যুক্তির ভিত্তিতেই আদালত মাসিক ভাতা ২৪,৮০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। গুজরাটের এই পদক্ষেপে দেশের অন্যান্য রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের চোখে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।

বাংলার কর্মীদের ক্ষোভ
বাংলার অঙ্গনওয়াড়ি সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্যে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনী সময়ে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য তেমন কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেয় না। মাসে ৯,০০০ টাকার ভাতা দিয়ে সংসার চালানো যায় না, অথচ কর্মীদের কাছ থেকে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে শিশু ও মহিলাদের দেখভাল করার মতো গুরুদায়িত্ব প্রত্যাশা করা হয়।

Also Read | গুঞ্জনের অবসান! ভারতে টিকটক অ্যাক্সেস নিয়ে বড়সড় আপডেট নয়াদিল্লির

উত্তর ২৪ পরগনার এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “আমরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শিশু ও মায়েদের নিয়ে কাজ করি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুষ্টির খাবার, পড়াশোনার দিক সবই দেখতে হয়। অথচ হাতে পাই মাত্র ৯,০০০ টাকা। গুজরাটে যদি কর্মীরা ২৪,৮০০ টাকা পান, তাহলে আমাদের সঙ্গে এই বৈষম্য কেন?”

Advertisements

রাজনৈতিক বিতর্কও তীব্র হচ্ছে
গুজরাট হাইকোর্টের নির্দেশকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গেও রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে যে, রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ন্যায্য অধিকার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিজেপির এক নেতা বলেন, “বাংলার সরকার দিদির জনপ্রিয় প্রকল্প নিয়ে প্রচার করে, কিন্তু যাঁরা মাঠে কাজ করছেন সেই অঙ্গনওয়াড়ি দিদিদের সম্মান দিতে চায় না।”

অন্যদিকে, শাসক দলের তরফে পাল্টা দাবি উঠছে যে, রাজ্যের আর্থিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে ধাপে ধাপে ভাতা বাড়ানো হচ্ছে। তবে কর্মীদের দাবি, “ধাপে ধাপে” নয়, এখনই সম্মানজনক ভাতা প্রয়োজন।

সামাজিক গুরুত্ব বনাম আর্থিক দায়
অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্প আসলে শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ার ভিত্তি। এখানে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব থাকে কর্মীদের কাঁধে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পকে শক্তিশালী করতে হলে কর্মীদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় প্রকল্পের কার্যকারিতা কমে যাবে। গুজরাট হাইকোর্ট সেই দিকেই দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।

অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, গুজরাটের মতো সমৃদ্ধ রাজ্য উচ্চ ভাতা চালু করতে পারলেও তুলনামূলকভাবে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত রাজ্যগুলির জন্য এটি কঠিন হতে পারে। তবে সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সম্মানী যথাযথ করা ছাড়া অন্য বিকল্প নেই।

আজকের দিনে যখন গুজরাটের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা মাসিক ২৪,৮০০ টাকা ভাতা পেতে চলেছেন, তখন বাংলার কর্মীরা মাত্র ৯,০০০ টাকা পেয়ে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। গুজরাটে এই ভাতা কার্যকর হলে বাংলার কর্মীরা কার্যত তিনগুণ কম পারিশ্রমিক পাবেন। ফলে তাদের দাবি জোরালো হচ্ছে— “আমাদের কাজের মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার দিন।”

এখন প্রশ্ন একটাই: গুজরাটের পথে হেঁটে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও কি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ভাতা বাড়াতে বাধ্য হবে? নাকি বাংলার কর্মীরা আরও দীর্ঘ সময় বঞ্চনার শিকার হবেন?