অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের জন্য ঐতিহাসিক রায় দিল গুজরাট হাইকোর্ট। রাজ্যের প্রায় এক লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী (Anganwadi Workers- AWWs) ও অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা (AWHs)-এর ন্যূনতম মাসিক ভাতা বহুগুণ বাড়িয়ে যথাক্রমে ২৪,৮০০ টাকা ও ২০,৩০০ টাকা নির্ধারণ করেছে আদালত। এতদিন যেখানে কর্মীরা মাত্র ১০,০০০ টাকা এবং সহায়িকারা ৫,৫০০ টাকা পেতেন, সেখানে হাইকোর্টের নতুন নির্দেশ কার্যকর হলে তাদের আর্থিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটবে।
আদালতের নির্দেশ ও যুক্তি
বিচারপতি এ. এস. সুপেহিয়া ও আর. টি. বচহানি সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার জানায়, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকারা “ন্যূনতম মজুরি” নয়, বরং “লিভিং ওয়েজ” বা জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকারী। আদালতের ভাষায়, গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা, শিশুদের পুষ্টি ও প্রাথমিক শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এই কর্মীরা। অথচ সামান্য ভাতার কারণে তারা নিজেরাই সম্মানজনক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হন।
Also Read | গুঞ্জনের অবসান! ভারতে টিকটক অ্যাক্সেস নিয়ে বড়সড় আপডেট নয়াদিল্লির
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, “অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের এত কম ভাতা প্রদান ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে সংরক্ষিত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।” তাই তাদের ন্যূনতম মজুরি ২৪,৮০০ টাকা ও ২০,৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হলো এবং এটি কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে। পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মজুরির বকেয়া অংশও পরবর্তীতে পরিশোধ করতে হবে।
পূর্ববর্তী রায় বাতিল
এর আগে, ২০২৪ সালের ২ আগস্ট হাইকোর্টের একক বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল যে, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের বেতন সরকারি স্থায়ী কর্মচারীদের সমান বিবেচনা করা হোক এবং তাদের চাকরি নিয়মিতকরণের নীতি প্রণয়ন করা হোক। সেই রায় অনুযায়ী তিন বছর আগের তারিখ থেকে বকেয়া বেতন দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। তবে ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার জানায়, এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের উপর বিশাল আর্থিক চাপ তৈরি করবে। তাই একক বেঞ্চের রায় খারিজ করে নতুন নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
Also Read | সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় কোনটি ভালো – সুকন্যা সমৃদ্ধি নাকি এফডি? জানুন বিস্তারিত
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ভূমিকা
ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে যে, এই ন্যূনতম মজুরি প্রদানের দায়িত্ব রাজ্য সরকার অথবা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে বহন করবে। এছাড়া, এই নির্দেশ কেবলমাত্র আদালতে মামলা করা কর্মীদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং গোটা গুজরাটের সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, অন্য কর্মীদের আর আলাদা করে আদালতে গিয়ে আবেদন করতে হবে না।
সরকারী তথ্য ও আর্থিক প্রভাব
২০২৪ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গুজরাটে প্রায় এক লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা কাজ করছেন। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর হলে সরকারের আর্থিক বোঝা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। যদিও আদালত জানিয়েছে, এ ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
“সমান কাজের জন্য সমান মজুরি” প্রশ্নে আদালতের মত
আদালত স্পষ্ট করেছে যে, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকার কাজকে সরাসরি সরকারি শ্রেণি-তৃতীয় বা শ্রেণি-চতুর্থ কর্মীদের কাজের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। তাদের যোগ্যতা, নিয়োগের প্রক্রিয়া ও কাজের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই “Equal Pay for Equal Work” নীতি এখানে সরাসরি প্রযোজ্য নয়। তবে তাদের কাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে আদালত জীবিকা নির্বাহের উপযুক্ত মজুরি নির্ধারণ করেছে।
কর্মীদের দাবি ও ভবিষ্যৎ দিক
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন যে, তাদের প্রদত্ত সম্মানী আসলে অপমানজনক এবং সংবিধানের ১৪, ১৬, ২১ ও ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। তারা নিয়মিতকরণ ও সরকারি কর্মচারীর মর্যাদার দাবিও তুলেছিলেন। হাইকোর্টের সর্বশেষ নির্দেশে সেই দাবির সবটুকু মেটানো না হলেও, তাদের আর্থিক মর্যাদার উন্নতি ঘটতে চলেছে নিঃসন্দেহে।
গুজরাট হাইকোর্টের এই রায় শুধু রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য নয়, দেশের অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে। কারণ, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা গোটা দেশে শিশু ও মহিলাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান ভরসা। তাদের শ্রমের যথাযথ স্বীকৃতি ও মর্যাদা নিশ্চিত করা ন্যায়বিচারের দাবিই ছিল।