দমদম সেন্ট্রাল জেলের মাঠ আজ রাজনৈতিক উত্তাপে ভরপুর। রাজ্যের রাজনীতি যে ইতিমধ্যেই গরম, তার সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিজেপির পক্ষ থেকে আয়োজিত কর্মসূচিতে হাজির হয়ে তিনি শুধু রাজ্যের উন্নয়নের দিশা দেখালেন না, বরং তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণও শানালেন। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল দমদম এবং সংলগ্ন এলাকায়। চারদিকের রাস্তায় কড়া নিরাপত্তা, হাজার হাজার কর্মী–সমর্থকের সমাগম, আর মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি—সব মিলিয়ে এক অনন্য রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
কর্মসূচির আবহ
দমদম সেন্ট্রাল জেল ঐতিহাসিকভাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় অসংখ্য বিপ্লবী এখানে বন্দি ছিলেন। সেই ঐতিহাসিক জায়গাতেই বিজেপি আজকের কর্মসূচির আয়োজন করে। সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ মাঠে ভিড় জমাতে থাকেন। দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুনে ভরে ওঠে চারদিক। বিজেপি নেতারা একে একে বক্তব্য রাখেন, আর তাঁদের বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
মঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথমেই শহিদ বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, “দমদমের এই মাটি শুধু বাংলার নয়, ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস বহন করছে। আজ এখানে এসে আমি গর্বিত।” এরপর তিনি সরাসরি আক্রমণ শানান রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। মোদীর অভিযোগ, রাজ্যে দুর্নীতি, সিন্ডিকেট রাজ, তোলাবাজি এবং মাফিয়ারাজ দিন দিন সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে।
তিনি দাবি করেন, কেন্দ্র সরকারের দেওয়া একাধিক প্রকল্প রাজ্যে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর, আয়ুষ্মান ভারতের স্বাস্থ্যসুবিধা বা উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস—সবই রাজ্যের মানুষকে পুরোপুরি দেওয়া হচ্ছে না বলেই অভিযোগ তুললেন তিনি।
উন্নয়নের বার্তা
তবে সমালোচনার পাশাপাশি তিনি উন্নয়নের স্বপ্নও দেখালেন। মোদী বলেন, “বাংলাকে আমরা আবার সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এখানে শিল্প আসুক, কর্মসংস্থান তৈরি হোক। যুবসমাজের হাতে কাজ তুলে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।” তিনি আশ্বাস দেন, আগামী দিনে বাংলায় উন্নত পরিকাঠামো, আধুনিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলবে কেন্দ্র সরকার।
রাজনীতির সমীকরণ
দমদমের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিজেপির এই কর্মসূচি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বিজেপি যে ক্রমশ জমি শক্ত করতে চাইছে, তা এ দিনের কর্মসূচি স্পষ্ট করে দিল। হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখে বিজেপি নেতৃত্ব আশাবাদী, এ অঞ্চলে তারা আরও ভালো ফল করবে।
অন্যদিকে, তৃণমূল এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছে। তাদের অভিযোগ, “বহিরাগত নেতা এনে বাংলার মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। বাংলার মানুষ সব বোঝে এবং উপযুক্ত জবাব দেবে।” তৃণমূলের তরফে দাবি, রাজ্যের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে কেন্দ্র সরকারই।
জনতার প্রতিক্রিয়া
কর্মসূচিতে উপস্থিত সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কেউ বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, এটা আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি। উনি যদি বাংলার উন্নয়ন করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা সমর্থন করব।” আবার কেউ কেউ মনে করেন, “শুধু প্রতিশ্রুতি দিলে হবে না, বাস্তব কাজ দেখতে হবে।”