কলকাতার আকাশপথে অবতরণের পর শুক্রবার সকালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৪ নম্বর ভিভিআইপি গেট দিয়ে বেরিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কনভয়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় এগিয়ে যায় যশোর রোড মেট্রো স্টেশনের দিকে। শহরের ব্যস্ততম এই রাস্তা এবং তার আশেপাশের এলাকাজুড়ে তখন সাজানো ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ভোর থেকেই বিমানবন্দর থেকে যশোর রোড পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং বিশেষ নিরাপত্তা কর্মী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায় যোগ করা। যশোর রোড মেট্রো স্টেশনে এসে তিনি উদ্বোধন করেন একসঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রো রুটের। এর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর থেকে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত মেট্রোর সম্প্রসারণ, জোকা-এসপ্ল্যানেড মেট্রোর নতুন অংশ এবং নিউ টাউন-সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বিশেষ ধাপ। এই তিনটি প্রকল্প কার্যত কলকাতার ভবিষ্যৎ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বদলে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যাতায়াতে বড় সুবিধা
যশোর রোড মেট্রো স্টেশনকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর থেকে শহরে প্রবেশের একটি নতুন দরজা খুলে গেল। এতদিন পর্যন্ত কলকাতার বিমানবন্দরে পৌঁছনো যাত্রীদের মূল ভরসা ছিল ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাব অথবা প্রাইভেট গাড়ি। ট্রাফিকের কারণে প্রায়ই বিমানবন্দর থেকে শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছতে অনেকটা সময় নষ্ট হত। কিন্তু বিমানবন্দর সংলগ্ন মেট্রো রুট চালু হলে নিউ গড়িয়া থেকে সরাসরি এয়ারপোর্ট যাতায়াত হবে অনেক দ্রুত এবং আরামদায়ক। অফিসগামী যাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ পর্যটক—সকলের ক্ষেত্রেই এটি হবে এক বিরাট সুবিধা।
নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
এই মেট্রো রুটগুলো চালু হওয়ায় শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, শহরের অর্থনীতিতেও আসবে নতুন গতি। বিশেষ করে বিমানবন্দর লাগোয়া এলাকায় তৈরি হবে ব্যবসা এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। নিউ টাউন ও সল্টলেকের তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র এবং অফিসগুলির সঙ্গে মেট্রোর সহজ যোগাযোগ আরও বিনিয়োগ টানতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি দক্ষিণ কলকাতা থেকে বিমানবন্দর কিংবা নিউ টাউনের দিকে যাওয়া যাত্রীদের জন্য এটি সময় বাঁচানোর বড় উপায় হয়ে দাঁড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “কলকাতা হল ভারতের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের রাজধানী। এই শহরকে নতুন যুগের সঙ্গে যুক্ত করতে হলে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা অপরিহার্য। আজ যে মেট্রো রুটগুলির উদ্বোধন হল, তা শুধু কলকাতাকেই নয়, সমগ্র বাংলার মানুষের স্বপ্নকে এক নতুন মাত্রা দেবে।” তিনি আরও জানান, ভারত সরকার দেশের প্রত্যেকটি বড় শহরে মেট্রো পরিষেবা সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। কলকাতা সেই প্রকল্পের অন্যতম কেন্দ্র।
রাজনৈতিক তাৎপর্য
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের রাজনৈতিক তাৎপর্যও কম নয়। রাজ্যে আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস দুই পক্ষই এই ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে সামনে রেখে প্রচারে নামবে বলে মনে করা হচ্ছে। মোদীর বক্তব্যের মধ্যেও উন্নয়নকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট। তৃণমূল শাসিত রাজ্যে কেন্দ্রের এই উদ্যোগ কার্যত বিজেপির পক্ষে শক্তি বাড়াবে কিনা, তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এক ধরনের আশাবাদী সুর শোনা গেল। অনেকেই জানান, যশোর রোড দিয়ে প্রতিদিনের যাতায়াত ট্রাফিক সমস্যার কারণে দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়াত। নতুন মেট্রো লাইন চালু হলে যাতায়াতে অনেকটা স্বস্তি আসবে। ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে কর্মজীবী মানুষ—সবার কাছে এই মেট্রো প্রকল্প কার্যকরী সমাধান হয়ে উঠবে।