কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে ভক্তসমাগম, নিরাপত্তায় নজিরবিহীন ব্যবস্থা

বীরভূমের সিদ্ধপীঠ তারাপীঠে (Tarapith) আজ কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও তন্ত্রসাধকের সমাগম হয়েছে। প্রতিবছরের মতোই এ বছরও কৌশিকী অমাবস্যাকে কেন্দ্র করে তারাপীঠে লক্ষাধিক…

Tarapith Temple new rules

বীরভূমের সিদ্ধপীঠ তারাপীঠে (Tarapith) আজ কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও তন্ত্রসাধকের সমাগম হয়েছে। প্রতিবছরের মতোই এ বছরও কৌশিকী অমাবস্যাকে কেন্দ্র করে তারাপীঠে লক্ষাধিক ভক্ত ভিড় জমিয়েছেন। ভোর থেকে রাতভর মায়ের আরাধনা ঘিরে চলে মহা ধুমধাম।

ভক্ত ও সাধকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এদিন গোটা তারাপীঠ মন্দির চত্বরকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। মন্দির চত্বরে মোতায়েন রয়েছেন পুলিশের প্রায় ৫০০ আধিকারিক-সহ ১৫০০ জন পুলিশকর্মী এবং সঙ্গে আরও ২০০০ সিভিক ভলান্টিয়ার। গোটা এলাকা নজরদারির আওতায় রাখতে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। বিভিন্ন মোড়ে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এমনকি ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমেও নিয়মিত নজরদারি চলছে। পুণ্যার্থীরা যাতে সমস্যায় পড়লে দ্রুত সাহায্য পান, সেজন্য ২১টি পুলিশ সহায়তা বুথ খোলা হয়েছে।

   

এছাড়া সরাসরি মায়ের আরতি ও পূজা প্রদর্শনের জন্য মন্দির চত্বরে বসানো হয়েছে একাধিক জায়েন্ট স্ক্রিন। সাজানো হয়েছে পুরো মন্দির এলাকা। শুক্রবার সারারাত মন্দির খোলা থাকবে যাতে ভক্তরা নিরবচ্ছিন্নভাবে পূজা দিতে পারেন।

কৌশিকী অমাবস্যা মানেই তারাপীঠ মহাশ্মশানে তন্ত্রসাধকদের সমাবেশ। কথিত আছে, সপ্তঋষি বশিষ্ঠ মুনি এই মহাশ্মশানের পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করে মা তারার দর্শন লাভ করেছিলেন। পরে সাধক বামদেবও কৌশিকী অমাবস্যার তিথিতে মহাশ্মশানের শ্বেতশিমুল বৃক্ষতলে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। সেই থেকে এই বিশেষ অমাবস্যা তিথি তারাপীঠে মহাসমারোহে পালিত হয়ে আসছে।

আজও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তন্ত্রসাধকরা এসেছেন তারাপীঠ মহাশ্মশানে। হাজার হাজার হোমকুণ্ডে জ্বলে উঠেছে অগ্নি। সাধক থেকে শুরু করে সাধারণ ভক্ত—সকলেই মায়ের দর্শনের আশায় মেতে উঠেছেন তন্ত্রসাধনায়।

বিশ্বাস করা হয়, কৌশিকী অমাবস্যায় দ্বারকা নদীতে স্নান করলে জীবনের সব পাপ থেকে মুক্তি মেলে এবং পূণ্যলাভ হয়। দ্বারকা নদীকে অনেকে গঙ্গার মতোই পবিত্র মনে করেন। সঠিক উপায়ে তন্ত্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে জীবনের বাঁধা বিপত্তি কেটে যায় বলেও ভক্তদের বিশ্বাস।

Advertisements

ভোরে মা তারাকে স্নান ও মঙ্গলারতির পর গর্ভগৃহ খুলে দেওয়া হয়। এরপর মাকে পাঁচ রকম মিষ্টি ফল দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। এই দিনে দু’বার প্রধান ভোগ দেওয়া হয়—একবার মধ্যাহ্নে, আরেকবার নিশি রাতে। মধ্যাহ্ন ভোগে থাকে পোলাও, অন্ন, ভাজা, খিচুড়ি, নানা তরকারি এবং শোল মাছ পোড়া। যেহেতু এটি তন্ত্রপীঠ, তাই মাছ রাখা হয় ভোগে। সন্ধ্যায় মাকে লুচি, সুজি, পায়েস, বিভিন্ন মিষ্টান্ন দিয়ে শীতল ভোগ নিবেদন করা হয়। রাতে মাকে খিচুড়ি, পোলাও, কারনবারি, পাঁঠার মাংস সহ ভোগ দেওয়া হয়। মন্দিরে যে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়, তার মাংসও মাকে নিবেদন করা হয়।

কথিত আছে, দেবী তারার অপর নাম কৌশিকী। শুম্ভ-নিশুম্ভ বধ করতে দেবী নিজ দেহকোষ থেকে বের হয়ে আর এক দেবীমূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। অন্যদিকে এইদিনই সাধক বামাক্ষ্যাপা তারাপীঠ মহাশ্মশানের শ্বেতশিমুল বৃক্ষতলে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তাই এই বিশেষ দিনে তন্ত্রসাধকরা ভগবতী তন্ত্রসাধনায় মেতে ওঠেন এবং পুণ্যার্থীরাও ভক্তিভরে মা তারার আরাধনা করেন।

আজ, শুক্রবার ২২ অগস্ট, অমাবস্যা তিথি শুরু হয়েছে সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে এবং তা চলবে শনিবার সকাল ১১টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যেই মায়ের নানা আচার ও পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় দেবী তারাকে স্বর্ণালঙ্কার পরিয়ে রাজবেশে সাজিয়ে দর্শনার্থীদের সামনে তোলা হবে।

তারাপীঠের সবচেয়ে বড় উৎসব কৌশিকী অমাবস্যা। আজকের দিনটি ঘিরে গোটা তারাপীঠ জুড়েই উৎসবের আবহে মাতোয়ারা ভক্ত থেকে সাধক—সবাই।