কলকাতা ময়দানে দুই প্রধান তথা ইমামি ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের লড়াই নতুন নয়। এই হাইভোল্টেজ ডার্বি ম্যাচ নিয়ে ব্যাপক উন্মাদনা দেখা যায় দুই প্রধানের সমর্থকদের মধ্যে। তবে শুধুমাত্র ৯০ মিনিট নয়। মাঠ ও মাঠের বাইরে ও দুই প্রধানের লড়াই সবস ময় সরগরম রাখে গোটা শহরকে। যারফলে অনেক সময় ফুটবলের ময়দানে লাগে রক্তের দাগ। উভয় দলের সমর্থকদের জার্সি ছেঁড়ার পাশাপাশি বহুবার হাতাহাতি ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার সাক্ষী থেকেছে স্টেডিয়াম সংলগ্ন অঞ্চল। ফলাফল যাই হোক না কেন মাঠের লড়াইয়ের তেজ যেন সহজেই নেমে আসে রাজপথে।
যারফলে সময়ের সাথে সাথেই ডার্বি ম্যাচে মাঠে আসতে হলে বারংবার ভাবতে হয় দুই দলের সমর্থকদের। তারপর ফলাফল নিজেদের প্রিয় দলের বিরুদ্ধে গেলেই যেন বিভিষিকা নেমে আসে সমর্থকদের মধ্যে। গত কয়েকদিন আগে ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল মোহন-ইস্ট। যেখানে শেষ পর্যন্ত একটি গোলের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। পরবর্তীতে স্টেডিয়াম সংলগ্ন অঞ্চলে হাতাহাতিতে জড়িয়ে ছিল উভয় দলের সমর্থকরা। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের পাশাপাশি কাদাপাড়া সংলগ্ন অঞ্চলে মাটিতে ফেলে মারা হয়েছিল লাল-হলুদ সমর্থকদের।
সেই নিয়েই এবার সরব হলেন ভারতীয় ফুটবলার প্রবীর দাস (Prabir Das)। ডার্বি ম্যাচের লড়াই, উন্মাদনা, দুই প্রধানের ঐতিহ্য ও গৌরবের কথা উল্লেখ করে এবার এক বিশেষ ভিডিও করলেন এই বাঙালি ফুটবলার। যেখানে দুই প্রধানের সমর্থকদের মধ্যে মাঠের লড়াই মাঠেই ফেলে রেখে আসার বার্তা দিতে শোনা যায় সকলের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ আগেই সেই ভিডিও নিজের সোশ্যাল সাইটে আপলোড করে তিনি লেখেন, ” মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল এই দুই ক্লাব প্রতিটি সমর্থকের কাছে মায়ের সমান। তাই এদের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। লড়াই সবসময় হওয়া উচিত মাঠে ৯০ মিনিটের জন্য, মাঠের বাইরে নয়। সব সমর্থকরা খারাপ হয় না, কিন্তু দু-একজন অসভ্য সমর্থকের জন্য দুই ক্লাবের সুনাম ও অন্যান্য ভদ্র সমর্থকদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়। আমি অনুরোধ করছি, উভয় ক্লাবের আল্ট্রাস এবং অন্যান্য সমর্থক সংগঠনগুলো যেন এমন বর্বর সমর্থকদের চিহ্নিত করে থামায় বা তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়।”
আরও বলেন, ” জয়-পরাজয়ের পর আমরা মজা করে একে অপরকে খোঁচা দিতে পারি, ঠাট্টা করতে পারি, এমনকি কথার লড়াইও চলতে পারে- কিন্তু কোনো অবস্থাতেই সহিংসতা, হাত তোলা কিংবা রাগের বশে কারও গায়ে হাত দেওয়া মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। মনে রাখবেন, প্রতিটি পরিবার চায় তাদের প্রিয়জন মাঠে গিয়ে খেলা উপভোগ করুক, আনন্দ নিয়ে ফিরে আসুক। কিন্তু যখন মাঠের বাইরের মারামারি ও নোংরামি সেই বিশ্ববিখ্যাত ডার্বির আবেগকে কলঙ্কিত করে দেয়, তখন কষ্ট পায় গোটা বাংলার ফুটবলপ্রেমী সমাজ। লজ্জিত হয় কলকাতার ফুটবলের অমূল্য ঐতিহ্য। তাই খেলা শেষ হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে আবারও ভ্রাতৃত্বের পরিচয় দিন যাতে আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি “সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল।” আপনাদের প্রত্যেকের জন্য রইল অগাধ ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আর ফুটবলকে প্রাণভরে ভালোবাসুন।