ভাড়া বাড়িতে থেকে সঞ্চয় করতে চান? মেনে চলুন এই ৫টি জরুরি টিপস

Financial planning: আজকের দিনে বাড়ির দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই কারণে অনেকেই ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার বদলে ভাড়ায় থাকার পথ বেছে নিচ্ছেন। বিশেষ করে শহরে…

Financial planning

Financial planning: আজকের দিনে বাড়ির দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই কারণে অনেকেই ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার বদলে ভাড়ায় থাকার পথ বেছে নিচ্ছেন। বিশেষ করে শহরে কর্মরত কর্পোরেট পেশাজীবীরা অফিসের কাছাকাছি থাকার সুবিধা কিংবা চাকরির প্রয়োজনে সহজে শহর বদলানোর জন্য ভাড়া নেওয়াকে বেশি কার্যকর মনে করেন। তবে ভাড়ার বাড়িতে থাকা মানেই আর্থিক স্বাধীনতা পাওয়া নয়। মাসে মাসে ভাড়া দেওয়া যেমন একটি স্থায়ী খরচ, তেমনি হঠাৎ বিপদ বা অপ্রত্যাশিত খরচও আর্থিক চাপে ফেলতে পারে। তাই ভাড়াটেদেরও কিছু স্মার্ট অর্থনৈতিক অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
নিচে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পার্সোনাল ফাইন্যান্স টিপস দেওয়া হলো, যা ভাড়াটেদের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর—

১. বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরি করুন
ভাড়াটেদের জন্য বাজেট তৈরি করা একেবারেই অপরিহার্য। সাধারণত আর্থিক বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন—মাসিক আয়ের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ যেন বাড়িভাড়া ও ইউটিলিটি খরচে ব্যয় হয়। তবে মহানগর বা মেট্রো শহরে এটি সবসময় সম্ভব হয় না। তবুও এটি একটি কার্যকর মানদণ্ড।

   

বাজেট তৈরি করার সময় মাসিক ইএমআই, সাবস্ক্রিপশন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, জ্বালানি, বাজার খরচ, পরিবহন, সঞ্চয় ও বিনোদনের জন্য আলাদা অংশ নির্ধারণ করতে হবে। ডিজিটাল খরচ ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিদিনের ব্যয় নজরে রাখা যায়। পরিবর্তনশীল খরচের ক্ষেত্রে কিছুটা অতিরিক্ত অনুমান রেখে বাজেট করলে আকস্মিক খরচ সামলানো সহজ হয়।

২. ভাড়া সাশ্রয়ের কৌশল খুঁজুন
বড় শহরে ভাড়ার বাড়ির খরচ অনেক সময় আয়ের বড় অংশ কেটে নেয়। তাই ভাড়াটেরা চাইলে ভাড়া কমানোর কিছু উপায় খুঁজতে পারেন। যেমন—
ফ্ল্যাটশেয়ার বা কো-টেন্যান্ট নেওয়া, ভাড়ার চুক্তি করার আগে স্থানীয় বাজারদর খোঁজ নেওয়া, পুরোনো ও নতুন বিল্ডিংয়ের ভাড়ার তুলনা করা, মালিকের সঙ্গে দরাদরি করা এই পদক্ষেপগুলো অনেক সময় ভাড়া খরচ কমিয়ে দেয়।

৩. জরুরি তহবিল তৈরি করুন
অপ্রত্যাশিত ঘটনা যেমন চাকরি হারানো, অসুস্থতা বা হঠাৎ মেরামতের খরচ আর্থিক স্থিতি নষ্ট করতে পারে। এজন্য জরুরি তহবিল থাকা খুব জরুরি। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, কমপক্ষে ৩-৬ মাসের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচের সমান অর্থ আলাদা করে জমাতে।
শুরুতে সামান্য হলেও প্রতি মাসে কিছু টাকা আলাদা সঞ্চয়ী হিসাবে রাখুন। ধীরে ধীরে এটি বড় হয়ে এক ধরনের আর্থিক সুরক্ষা দেবে। এতে বিপদের সময় উচ্চ সুদের ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের ওপর নির্ভর করতে হবে না।

Advertisements

৪. ভাড়ার চুক্তি ভালোভাবে পড়ুন
অনেক সময় ভাড়াটেরা তাড়াহুড়ো করে ভাড়ার চুক্তিতে সই করে ফেলেন। কিন্তু এটি একটি আইনি নথি, তাই প্রতিটি ধারা ভালোভাবে পড়া উচিত। বিশেষ করে—
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কার দায়িত্ব, আগাম ভাড়া বাড়ানোর শর্ত, চুক্তি ভাঙার নিয়ম, জরিমানার শর্ত।
যেকোনো মৌখিক প্রতিশ্রুতিও লিখিত আকারে রাখুন। এছাড়া বাড়ি নেওয়ার আগে ভালোভাবে ঘুরে দেখে সমস্যা থাকলে ছবি বা ভিডিও করে রাখুন। এতে ভবিষ্যতে জামানত ফেরত নিয়ে বিরোধ এড়ানো সম্ভব।

৫. রেন্ট ক্রেডিট স্কোর তৈরি করুন
আগে ক্রেডিট স্কোর তৈরি হতো কেবল ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড সময়মতো শোধ করার মাধ্যমে। কিন্তু এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাড়ার সময়মতো পরিশোধও ক্রেডিট স্কোর তৈরিতে সহায়ক হচ্ছে। বিভিন্ন অ্যাপ ভাড়াটেদের ‘রেন্ট ক্রেডিট স্কোর’ তৈরি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শেয়ার করছে। এটি ভাড়াটের নির্ভরযোগ্যতার পরিচায়ক এবং ভবিষ্যতে ঋণ, এমনকি হোম লোন পেতেও সাহায্য করতে পারে।

ভাড়ায় থাকা শুধু মাথার উপর ছাদ পাওয়া নয়, বরং একটি আর্থিক যাত্রার অংশ। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিকল্পনা করলে ভাড়াটেরা যেমন বর্তমান খরচ সামলাতে পারবেন, তেমনি ভবিষ্যতের জন্যও স্থিতিশীল ভিত্তি গড়ে তুলতে পারবেন। বাড়ি কেনার দিন থেকেই আর্থিক পরিকল্পনা শুরু হয় না—বরং প্রথম আয়ের দিন থেকেই শুরু হওয়া উচিত। তাই ভাড়াটে হোক বা গৃহকর্তা, স্মার্ট মানি ম্যানেজার হওয়াই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।