বিশ্বায়নের সঙ্গেই বনভূমির পরিমাণ বেড়েছে ভারতে! প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট

ভারতের বনভূমির পরিমাণে (India Forest Cover ) সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থির ও ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ার একটি চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত হয়েছে। ইন্ডিয়ান ইন্ডেক্স নামক একটি সামাজিক…

India Forest Cover Surges Despite Global Deforestation

ভারতের বনভূমির পরিমাণে (India Forest Cover ) সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থির ও ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ার একটি চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত হয়েছে। ইন্ডিয়ান ইন্ডেক্স নামক একটি সামাজিক মাধ্যমের হ্যান্ডল থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে ৬.৩৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ২০২৩ সালে বনভূমির আয়তন বেড়ে ৭.১৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধি প্রায় ১৩ শতাংশের কাছাকাছি, যা বৈশ্বিক পরিবেশ সংরক্ষণের দিক থেকে একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এফএসআই) দ্বারা প্রকাশিত এই তথ্যগুলো স্যাটেলাইট ডেটা ও নরমালাইজড ডিফারেন্স ভেজিটেশন ইনডেক্স (এনডিভিআই) পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে, যা বন উন্নয়নের সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারতের অবদান
বৈশ্বিক পরিসরে বন উজাড়ের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে চলেছে। বিশ্ব সম্পদ ইনস্টিটিউটের (ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট) সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১০.৯ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি হারিয়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের বনভূমি বৃদ্ধির গল্প একটি আশার আলো হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত সরকারের গ্রিন ইন্ডিয়া মিশন (জিআইএম) এবং বিভিন্ন অফরেস্টেশন প্রকল্পের ফলেই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। জিআইএম-এর পুনর্বিবেচিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের ২৪.৭ মিলিয়ন হেক্টর জমি বন ও গাছের আবরণে পরিণত করার লক্ষ্য রয়েছে, যা কার্বন ডাই অক্সাইডের সঞ্চয়ে ১.৮৯ বিলিয়ন টনের বেশি অবদান রাখতে পারে।

   

স্থানীয় প্রচেষ্টা ও অঞ্চলভেদ
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বনভূমি পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। আরবালি পর্বতমালা, পশ্চিমঘাট, হিমালয় ও ম্যানগ্রোভ বনের পুনরুদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০১৫-২০২১ সালের মধ্যে জিআইএম-এর তত্ত্বাবধানে ১১.২২ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে গাছ লাগানো হয়েছে, যা কেবল বনভূমি বাড়ানোর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সহায়তা করছে। পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন এবং উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে বন উন্নয়নের কাজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
যদিও বনভূমির বৃদ্ধি একটি ইতিবাচক সংবাদ, তবুও চ্যালেঞ্জগুলো অগ্রাহ্য করা যায় না। বর্তমানে ভারতের বনভূমি দেশের মোট ভূ-আয়তনের ২২% আবরণ করছে, যা ১৯৮৮ সালের জাতীয় বন নীতিতে নির্ধারিত ৩৩% লক্ষ্য থেকে এখনো দূরে। শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং কৃষি বিস্তারের কারণে বনভূমি হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ও টেকনোলজির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হতে পারে।

Advertisements

জনগণের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে এই রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কিছু ব্যবহারকারী এই উন্নতিকে ভারতের পরিবেশ সংরক্ষণের সাফল্য হিসেবে প্রশংসা করছেন, যেমন একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বনভূমির বৃদ্ধি একটি গর্বের বিষয়, কিন্তু এখনো অনেক কিছু করা বাকি।” অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষক সতর্কতা জানাচ্ছেন যে, বনের গুণগত মান ও জৈব বৈচিত্র্য রক্ষায় আরও মনোযোগ দেওয়া দরকার।

ভারতের বনভূমির বৃদ্ধি বিশ্বায়নের চাপ সত্ত্বেও একটি উদাহরণীয় উদ্যোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে, এই সাফল্যকে টেকসই করতে সরকার, বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আজ থেকে ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পগুলোর ফলাফল কী হবে, তা দেখতে বাকি। তবে এটি নিশ্চিত যে, ভারতের পরিবেশ সংরক্ষণের যাত্রা এখনো শেষ হয়নি, এবং এই দিকে এগিয়ে যাওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব।