কেন্দ্র সরকার বেতনভোগী করদাতাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ (CBDT) আয়কর বিধি, ১৯৬২-তে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে, যার ফলে বেতনভোগীদের জন্য করমুক্ত সুযোগ-সুবিধা বা পার্কুইজিট (Perquisites) আরও বিস্তৃত হলো। ২০২৫ সালের ১৮ আগস্ট প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আয়কর বিধিতে নতুন নিয়ম ৩সি ও ৩ডি যোগ করা হয়েছে। এই নতুন বিধি অনুসারে, করমুক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য আয়ের সীমা যথেষ্ট বাড়ানো হয়েছে, যা কার্যকর হবে আগামী ১ এপ্রিল ২০২৫ থেকে। অর্থাৎ করবর্ষ ২০২৬-২৭ থেকে বেতনভোগী কর্মীরা এই নতুন সীমার সুবিধা নিতে পারবেন।
কী কী পরিবর্তন হলো?
নতুন কাঠামো অনুযায়ী, করমুক্ত পার্কুইজিটের জন্য আয়ের সীমা নিম্নরূপ বাড়ানো হয়েছে:
- নির্দিষ্ট কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সীমা: আগে যেখানে আয়ের সীমা ছিল ৫০,০০০ টাকা, সেখানে এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪ লক্ষ টাকা।
- বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সীমা: আগে নির্ধারিত সীমা ছিল ২ লক্ষ টাকা, যা এখন বাড়িয়ে করা হলো ৮ লক্ষ টাকা।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, এই সীমাগুলি কোনো পার্কুইজিটের আর্থিক মূল্যের সাথে সম্পর্কিত নয়। বরং কর্মচারীর বেতন বা মোট আয়ের যোগ্যতা অনুযায়ী এই করমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করা যাবে। অর্থাৎ, যেসব কর্মীর মোট আয় নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকবে, তারা নির্দিষ্ট সুবিধা করমুক্তভাবে পাবেন।
কবে থেকে কার্যকর হবে নতুন নিয়ম?
CBDT জানিয়েছে, এই সংশোধনীগুলি ১ এপ্রিল ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে এবং আয়কর বর্ষ ২০২৬-২৭ থেকে তা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে আয় করা বেতনের উপর কর ফাইল করার সময় করদাতারা নতুন সীমার আওতায় সুবিধা নিতে পারবেন।
কর বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন মাঝারি স্তরের পেশাজীবী ও বিদেশে কর্মরত বেতনভোগীরা। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই চাকরিজীবীদের বেতনের একটি বড় অংশ নানা ধরনের পার্কুইজিট বা বেনিফিট আকারে দেওয়া হয়। কিন্তু এতদিন কম আয়ের সীমার কারণে, মাঝারি স্তরের কর্মীরাও করমুক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতেন।
নতুন নিয়ম কার্যকর হলে, এ ধরনের কর্মীরা সহজেই চিকিৎসা খরচ, হাউস রেন্ট ফ্রি অ্যাকমোডেশন, কিংবা অন্যান্য নির্দিষ্ট পার্কুইজিট করমুক্তভাবে পাবেন। ফলে সার্বিকভাবে করভার হালকা হবে এবং আয়ের সুষম ব্যবহার সম্ভব হবে।
আয়করের ভাষায়, পার্কুইজিট বলতে বোঝায় নিয়োগকর্তা কর্তৃক কর্মচারীকে দেওয়া অতিরিক্ত সুবিধা বা বেনিফিট, যা সরাসরি নগদ বেতনের অংশ নয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
নিয়োগকর্তার খরচে চিকিৎসা সুবিধা, বাড়ি ভাড়া ছাড়া বসবাসের সুযোগ (Rent-free Accommodation), বিদেশে কর্মরত অবস্থায় বিশেষ সুবিধা ও অন্যান্য নির্দিষ্ট সুবিধা।
এগুলোকে অনেক ক্ষেত্রেই আয় হিসেবে গণনা করা হয় না, তবে নির্দিষ্ট আয়ের সীমার মধ্যে থাকলেই কেবল করমুক্তভাবে সুবিধা গ্রহণ করা যেত।
আয়কর আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতদিন পর্যন্ত করমুক্ত সুবিধার সীমা তুলনামূলকভাবে অনেক নিচু ছিল, যার ফলে সামান্য আয়ের কর্মীরাও এর বাইরে চলে যেতেন। উদাহরণস্বরূপ, ৫০,০০০ টাকার সীমা বহু আগেই বাস্তব পরিস্থিতির তুলনায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিল।
বর্তমান বেতন কাঠামো এবং চিকিৎসা খরচের বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে সরকার এবার সীমা বাড়িয়েছে। এর ফলে বেতনভোগী শ্রেণির উপর চাপ অনেকটা কমবে। বিশেষত, যেসব কর্মীর বেতনের একটি অংশ বিভিন্ন বেনিফিট বা পার্কুইজিট হিসেবে পাওয়া যায়, তারা করের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য স্বস্তি পাবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ ভারতের সামগ্রিক কর ব্যবস্থাকে আরও সমতাভিত্তিক করে তুলবে। করভার কমলে বেতনভোগীরা বেশি খরচ করতে পারবেন, যার ফলে দেশীয় ভোগব্যয় বাড়বে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
অন্যদিকে, বিদেশে পোস্টিং থাকা কর্মীদের জন্যও এটি বড় সুবিধা হবে। কারণ চিকিৎসা বা বিদেশে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সুবিধার ক্ষেত্রে আয়ের সীমা এতদিন কম থাকায় অনেকেই কর দিতে বাধ্য হতেন। এখন সেই সমস্যা দূর হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “সরকারের উদ্দেশ্য হলো বেতনভোগীদের করভার যৌক্তিক মাত্রায় আনা। এভাবে কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, আবার সরকারের রাজস্বও সুষমভাবে সংগৃহীত হবে।”
CBDT–এর এই নতুন বিধি কার্যকর হলে প্রায় কোটি কোটি বেতনভোগী করদাতা সরাসরি উপকৃত হবেন। বেতনভোগী শ্রেণির জন্য এটি এক বড় স্বস্তির খবর, বিশেষত যারা মাঝারি স্তরের চাকরিজীবী এবং যাদের বেতনের উল্লেখযোগ্য অংশ নানা পার্কুইজিট আকারে আসে।
২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর এই সিদ্ধান্ত সরকারের কর কাঠামোকে আধুনিক এবং বাস্তবসম্মত করার এক বড় পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।