ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে বদলে গেল একাধিক নিয়ম

ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (BCCI)-এর আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরে বিসিসিআই-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) নির্বাচন নতুন জাতীয়…

BCCI election

ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (BCCI)-এর আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরে বিসিসিআই-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) নির্বাচন নতুন জাতীয় ক্রীড়া শাসন আইন ২০২৫ (ন্যাশনাল স্পোর্টস গভর্নেন্স অ্যাক্ট)-এর নিয়ম মেনে করার জন্য তারা আগ্রহী।

তবে, যদি এই আইনের বিস্তারিত নির্দেশিকা সময়মতো প্রকাশিত না হয়, তাহলে বিসিসিআই সুপ্রিম কোর্ট-অনুমোদিত লোঢা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। এই ঘোষণা ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন তুলেছে।

   

জাতীয় ক্রীড়া শাসন আইন ২০২৫-এর মাধ্যমে বিসিসিআই-কে জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন (এনএসএফ) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে, যা এই সংস্থাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসবে। এই আইনের অধীনে বিসিসিআই-কে প্রতি বছর জাতীয় ক্রীড়া বোর্ড (এনএসবি)-এর কাছ থেকে স্বীকৃতি নিতে হবে। এছাড়া, নির্বাচন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, আর্থিক জবাবদিহিতা এবং ক্রীড়াবিদদের কল্যাণে নতুন নিয়ম মানতে হবে।

বিলটি বিসিসিআই-এর মতো শক্তিশালী সংস্থাকেও সরকারি তদারকির আওতায় আনার লক্ষ্য রাখে, যা দীর্ঘদিন ধরে স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই আইনের মাধ্যমে বিসিসিআই-এর সমস্ত আইনি বিরোধ জাতীয় ক্রীড়া ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে, যা বিচারিক প্রক্রিয়াকে দ্রুত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিসিসিআই-এর বর্তমান সভাপতি রজার বিনি, যিনি ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য, নতুন আইনের বয়সসীমা নিয়মের কারণে পুনরায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আইন অনুযায়ী, ৭০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা পদাধিকারী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)-এর নিয়মে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।

তবে, নতুন আইনে ৭০ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত বয়সী ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদি আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের নিয়ম এটির অনুমোদন দেয়। বিনি, যিনি ৭০ বছর পেরিয়েছেন, এই নিয়মের কারণে পদ ছাড়তে বাধ্য হবেন।

বিসিসিআই-এর নির্বাচন সাধারণত সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে এজিএম-এর সময় অনুষ্ঠিত হয়। নতুন আইনের নিয়ম মেনে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে বিসিসিআই-এর স্বীকৃতি বাতিল হতে পারে, এবং এটি ভারতের নামে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ বা আয়োজনের অধিকার হারাতে পারে।

Advertisements

এই নিয়ম ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য একটি বড় পরিবর্তন, কারণ বিসিসিআই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং প্রভাবশালী ক্রীড়া সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিসিসিআই ১৮,৭০০ কোটি টাকা আয় করেছে এবং ৪,২৯৮ কোটি টাকা কর প্রদান করেছে।

বিসিসিআই-এর স্বায়ত্তশাসন এবং আর্থিক স্বাধীনতা সত্ত্বেও, নতুন আইন এটিকে রাইট টু ইনফরমেশন (আরটিআই) আইনের আওতায় আনবে, যা জনসাধারণের জবাবদিহিতা বাড়াবে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, “বিসিসিআই সরকারি তহবিল না নিলেও, এটি দেশের আইনের অধীনে থাকবে। এই আইন সরকারি নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং সুশাসনের জন্য একটি সুবিধাদাতা হিসেবে কাজ করবে।”

তবে, কংগ্রেস এবং বিজু জনতা দলের মতো বিরোধী দলগুলি এই আইনকে অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণের অভিযোগ তুলে সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, জেলা ও ব্লক পর্যায়ে ক্রীড়ার উন্নয়নের দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া হয়নি।

এক্স-এ এই বিষয়ে আলোচনা তুঙ্গে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বিসিসিআই-এর উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কি ভারতীয় ক্রিকেটের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করবে?” আরেকজন লিখেছেন, “নতুন আইন স্বচ্ছতা আনবে, কিন্তু বিসিসিআই-এর মতো শক্তিশালী সংস্থার উপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ কি প্রয়োজন?”

বাংলার বিখ্যাত শিল্পের কর্মী সংখ্যায় শীর্ষে অবাঙালি প্রধান রাজ্য

এই আইন ভারতের ক্রীড়া প্রশাসনের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে, বিশেষ করে ২০৩৬ অলিম্পিক আয়োজনের প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে। বিসিসিআই-এর নির্বাচন কীভাবে এই নতুন নিয়মের অধীনে পরিচালিত হবে, তা ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে।