নারকেল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষে ভারত

২০২৫ সালের আগস্ট মাসে আন্তর্জাতিক নারকেল থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নারকেল উৎপাদনে (Coconut Production) ভারত বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক নারকেল সম্প্রদায় (International Coconut…

India Leads Global Coconut Production

২০২৫ সালের আগস্ট মাসে আন্তর্জাতিক নারকেল থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নারকেল উৎপাদনে (Coconut Production) ভারত বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক নারকেল সম্প্রদায় (International Coconut Community – ICC) এর ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের মোট নারকেল উৎপাদনের ৭৩.৭% ভারত, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো তিনটি দেশের হাতে নিয়ন্ত্রিত। এর মধ্যে ভারত এককভাবে ২৯.৩% অংশ দায়িত্ব নিচ্ছে, যা দেশের কৃষি অর্থনীতির গুরুত্ব ও সমৃদ্ধির প্রতীক। ফিলিপাইন (২২.৭%) এবং ইন্দোনেশিয়া (২১.৭%) ভারতের পাশাপাশি এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এই তথ্যগুলো প্রমাণ করে যে, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নারকেল উৎপাদনে একটি কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উদয় হচ্ছে।

ভারতের নারকেল উৎপাদনের গল্প
ভারতের নারকেল উৎপাদনের কথা বললে প্রথমে মনে পড়ে কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক এবং আন্ধ্রপ্রদেশের সবুজ নারকেল বাগান। এই অঞ্চলগুলো দেশের নারকেল উৎপাদনের মূল ভিত্তি। নারকেল উন্নয়ন বোর্ড (Coconut Development Board) এর তথ্য অনুযায়ী, ভারত প্রতি বছর প্রায় ১৫০ লক্ষ মেট্রিক টন নারকেল উৎপাদন করে, যা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারকেল থেকে তৈরি হওয়া পণ্য যেমন কোকোনাট ওয়াটার, কোকোনাট অয়েল, কোপ্রা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্যগুলো বাজারে বিশেষ চাহিদা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, নারকেলের পাতা ও কাঠও গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যবহার হয় বাসস্থান ও শিল্পকর্মের জন্য, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।

   

তবে, এই সাফল্যের পেছনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কেরালার নারকেল অর্থনীতি বেশ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। হিন্দুস্থান টাইমসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষ নারকেল চড়ুইদের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং মজুরি শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া একটি বড় সমস্যা। এর সাথে নারকেল ও এর পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়া কেরালার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ফলে অনেক কৃষক বিকল্প ফসলের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে নারকেল উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
নারকেল উৎপাদনে ভারতের অবদান এবং এর বৈশ্বিক প্রভাব বাড়ার জন্য আন্তর্জাতিক নারকেল সম্প্রদায় (ICC) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ICC, যা ১৯৬৯ সালে জাতিসংঘের অধীনে গঠিত একটি সংস্থা, ২১টি নারকেল উৎপাদনকারী দেশকে একত্রিত করে, যার মধ্যে ভারত, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্থা বিভিন্ন জাতিসংঘ সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন CGIAR, UNIDO এবং Bioversity International-এর সঙ্গে সমন্বয় করে নারকেল শিল্পের উন্নতি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করে।

Advertisements

ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে নারকেল ও তেলহীন ফসলের উৎপাদন নিয়ে সহযোগিতার একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে তেলহীন ফসলের ব্যবহার ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে একটি স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যা উভয় দেশের কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। প্রাচীন কালে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার মহাজনপদ যেমন শ্রীবিজয় ও মজাপাহিতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, যা আজকের দিনে কৃষি ও বাণিজ্যে একটি ঐতিহ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে।

চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের পথ
যদিও ভারত নারকেল উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে, তবুও জলবায়ু পরিবর্তন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং শ্রমিকদের সংকটের মতো বিষয়গুলো উৎপাদন ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। কেরালায় নারকেল গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং শিল্পায়নের কারণে কৃষি জমি হ্রাস পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার বিষয়। তবে, সরকার ও ICC-এর সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যাগুলোর সমাধানের চেষ্টা চলছে। নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ, দক্ষ কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং নারকেল চড়ুইদের জন্য উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

ভারতের নারকেল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান এটি একটি গর্বের বিষয়। তবে, এই অবস্থান ধরে রাখতে এবং আরও উন্নতি করতে হলে কৃষকদের সঙ্গে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। নারকেল শিল্পের ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল, যা ভারতের কৃষি অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।