কর্নাটক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া (Siddaramaiah) নেতৃত্বাধীন প্রশাসন কেরালার ওয়ানাডে গত বছরের ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত ১০০টি পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ১০ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, কারণ ওয়ানাড লোকসভা কেন্দ্রটি কংগ্রেসের প্রবীণ নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রের সংসদীয় আসন।
বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে অভিযোগ করেছে যে, কর্নাটকের করদাতাদের টাকা কংগ্রেসের হাইকমান্ডকে খুশি করার জন্য কেরালায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। বিজেপি এই ঘটনাকে “কন্নড়দের টাকার অপব্যবহার” হিসেবে অভিহিত করেছে।২০২৪ সালের জুলাই মাসে ওয়ানাডের মেপ্পাডি অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি এবং সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি, জীবিকা এবং সম্পত্তি হারিয়েছে। কর্নাটক সরকার এই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পুনর্বাসনের জন্য রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল (এসডিআরএফ) থেকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে মানবিক সাহায্য হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, বিজেপি অভিযোগ করেছে যে এটি কেবল প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে খুশি করার জন্য করা হয়েছে।
কর্নাটক বিজেপি সভাপতি বি. ওয়াই. বিজয়েন্দ্র এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া, আপনিই কি দিল্লিতে ‘মাই ট্যাক্স, মাই রাইট’ বলে প্রচার করেননি, যে কর্নাটকের টাকা রাজ্যের বাইরে যাওয়া উচিত নয়? তবুও আজ আপনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কেন্দ্র ওয়ানাডের জন্য ১০ কোটি টাকা স্থানান্তর করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “কর্নাটকের কৃষকরা ফসলের ক্ষতির মুখে পড়েছেন, বিধায়কদের কেন্দ্রে উন্নয়নের জন্য তহবিল নেই, স্কুল-কলেজের পরিকাঠামোর অভাব, কিন্তু কংগ্রেস সরকার হাইকমান্ডকে খুশি করতে কোটি কোটি টাকা কেরালায় পাঠাচ্ছে।”
বিজেপি নেতা আর. অশোক সিদ্ধারামাইয়াকে ‘কেরালার মুখ্যমন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ করে বলেন, “কর্নাটকের রাস্তায় গর্ত, উত্তর কর্নাটক উপেক্ষিত, বেকারত্ব বাড়ছে, তবুও সিদ্ধারামাইয়া ওয়ানাডের জন্য জমি কিনে ঘর তৈরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
তিনি কি কর্নাটকের জন্য কাজ করছেন, নাকি গান্ধী পরিবারের জন্য?” বিজেপি আরও উল্লেখ করেছে যে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কর্নাটক সরকার ওয়ানাডে একটি হাতির আক্রমণে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল, যা রাহুল গান্ধীর নির্দেশে দেওয়া হয়েছিল।
কংগ্রেস এই অভিযোগের জবাবে বলেছে, এটি একটি মানবিক উদ্যোগ। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাও বলেন, “মানবিক কারণে এই সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। কর্নাটক কেন্দ্রকে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়, কিন্তু বিনিময়ে কী পায়? এই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বিতর্ক করার পরিবর্তে বড় প্রশ্ন তোলা উচিত।” শিল্পমন্ত্রী এম. বি. পাটিল বলেন, “অন্যান্য রাজ্যেও আমরা বন্যা বা দুর্যোগের সময় সাহায্য দিয়েছি। এতে কোনো ভুল নেই।”
তবে, বিজেপি দাবি করেছে যে ১০০টি পরিবারের জন্য ১০ কোটি টাকা মানে প্রতি পরিবারে ১০ লক্ষ টাকা, যা অভূতপূর্ব। তারা তুলনা করে বলেছে, কর্নাটকে হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মাত্র ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। জেডিএসও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছে, কর্নাটকের কর্মচারীদের বেতন বাকি থাকলেও সরকার কেরালার জন্য টাকা ব্যয় করছে।
এক্স-এ এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “কর্নাটকের টাকা কেন কেরালায় যাচ্ছে? এটা কি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে খুশি করার জন্য?” আরেকজন লিখেছেন, “কর্নাটকের ঋণ ৬৩,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, তবুও কংগ্রেস সরকার ওয়ানাডে টাকা পাঠাচ্ছে।”
ভারতে লঞ্চ হল Hero Xtreme 125R, মিলবে সিঙ্গেল সিটের সুবিধা, দাম কত?
এই বিতর্ক কর্নাটকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। বিজেপি ও জেডিএস সরকারের আর্থিক অবস্থা এবং অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, কংগ্রেস এটিকে মানবিক সাহায্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। এই ঘটনা আগামী দিনে রাজ্যের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।