নির্বাচনের আগে নীতীশের টুপি প্রত্যাখ্যানে ধ্বংস ধর্ম নিরপেক্ষতার ইমেজ

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের (Nitish) একটি সাম্প্রতিক ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। বৃহস্পতিবার পাটনায় রাজ্য মাদ্রাসা বোর্ডের একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে টুপি পরতে দেওয়া…

Nitish

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের (Nitish) একটি সাম্প্রতিক ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। বৃহস্পতিবার পাটনায় রাজ্য মাদ্রাসা বোর্ডের একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে টুপি পরতে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা পরতে অস্বীকার করেন এবং টুপিটি মন্ত্রী জামা খানের মাথায় পরিয়ে দেন।

এই ঘটনা বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তাঁর দীর্ঘদিনের ধর্মনিরপেক্ষ ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দল, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD), এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নীতীশের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে।নীতীশ কুমার, যিনি জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডি(ইউ)-এর নেতা এবং বিহারের দীর্ঘদিনের মুখ্যমন্ত্রী, দীর্ঘদিন ধরে ধর্মনিরপেক্ষ নেতা হিসেবে পরিচিত।

   

তিনি অতীতে ইফতার পার্টি এবং ইসলামিক অনুষ্ঠানে টুপি পরতে দেখা গেছে, যা তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ইমেজকে শক্তিশালী করেছিল। তবে এই সাম্প্রতিক ঘটনা তাঁর রাজনৈতিক কৌশল এবং বিজেপির সঙ্গে জোটের প্রেক্ষাপটে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

আরজেডি মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি বলেন, “নীতীশ কুমারের এই আচরণ অত্যন্ত অশোভন এবং ধর্মের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে। তিনি যদি মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার হরণকারীদের সমর্থন করেন, তবে টুপি পরার প্রয়োজন কী?”

এই ঘটনা ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে। নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ) বর্তমানে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের অংশ, এবং তাঁর এই পদক্ষেপ বিরোধীদের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে বিরোধীরা দাবি করছেন যে নীতীশের এই আচরণ তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ইমেজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিওয়ারি আরও বলেন, “নীতীশ কুমারের এই পদক্ষেপ তাঁর দ্বিচারিতা প্রকাশ করে। তিনি একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবি করেন, অন্যদিকে বিজেপির সঙ্গে জোট করে এমন পদক্ষেপ নেন যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মনে আঘাত দেয়।”

নীতীশ কুমারের ধর্মনিরপেক্ষ ইমেজ অতীতে তাঁর জন্য একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পদ ছিল। তিনি বিহারে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছেন, যেমন মুসলিম ছাত্রদের জন্য বৃত্তি, তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের জন্য ভাতা এবং কবরস্থানের বেড়া নির্মাণ। এমনকি বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকাকালীন তিনি ১৯৮৯ সালের ভাগলপুর দাঙ্গার মামলা পুনরায় খুলেছিলেন, যা তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ইমেজকে জোরদার করেছিল।

তবে, সম্প্রতি ওয়াকফ বিলের সমর্থন এবং এই টুপি প্রত্যাখ্যানের ঘটনা তাঁর এই ইমেজের উপর ছায়া ফেলেছে। বিহারের একটি বিশিষ্ট মুসলিম সংগঠন, ইমারত শরিয়া, ওয়াকফ বিলের সমর্থনের জন্য নীতীশের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে, তাঁকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করে।

Advertisements

এক্স-এ এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কেউ কেউ নীতীশের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “এটি নীতীশ কুমারের নতুন রূপ, যিনি অপ্রয়োজনীয় প্রতীকীতার পরিবর্তে নীতির উপর জোর দিয়েছেন।”

অন্যদিকে, বিরোধীরা এটিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি অসম্মান হিসেবে দেখছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “নীতীশ কুমার যদি মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার হরণকারীদের সঙ্গে থাকেন, তবে টুপি পরার নাটকের প্রয়োজন কী?”

বিহারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ। নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ) এনডিএ জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং তাঁর নেতৃত্বে এনডিএ ২০২৫ সালের নির্বাচনে লড়াই করবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, তাঁর স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনা তীব্র হচ্ছে।

আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এবং জন সুরাজ পার্টির প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছেন যে নীতীশের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে এবং তিনি ২০২৫ সালের নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না।

Kolkata Metro New Routes: ছুটবে গ্রিন, ইয়েলো, অরেঞ্জ লাইনে মেট্রো, জেনে নিন সময়সূচি

নীতীশ কুমারের এই ঘটনা তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং বিহারের নির্বাচনী সমীকরণের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। মুসলিম ভোটাররা, যারা অতীতে তাঁকে সমর্থন করেছে, এই ঘটনার পর তাঁর প্রতি তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারে। বিহারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন নীতীশের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং বিরোধীদের কৌশলের উপর নির্ভর করছে।