হাই কোর্টে মিলল আগাম জামিন, তবে শর্তসাপেক্ষে পরেশ-স্বপন-পাপিয়া

কাঁকুড়গাছি এলাকায় নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের মৃত্যুকে ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোরের আবহে বৃহস্পতিবার এক বড় আইনি সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর…

Kolkata High Court suicide attempt

কাঁকুড়গাছি এলাকায় নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের মৃত্যুকে ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোরের আবহে বৃহস্পতিবার এক বড় আইনি সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর সিঙ্গল বেঞ্চ তৃণমূলের তিন নেতাকে শর্তসাপেক্ষে আগাম জামিন মঞ্জুর করেছে।

জামিন পেলেন—তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল, কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার এবং পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার পাপিয়া ঘোষ। আদালত তাঁদের প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

   

মামলার সূত্রপাত

২০২১ সালে বিধানসভা ভোট-পরবর্তী সময়েই অভিজিৎ সরকার খুন হন। বিজেপির এই কর্মীর মৃত্যুকে ঘিরে গোটা রাজ্য জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। পরিবার সূত্রে অভিযোগ ওঠে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে তাঁর উপর হামলা চালানো হয়। এই ঘটনার তদন্তে একাধিকবার নাম উঠে আসে এলাকার তৃণমূল নেতাদের। নিহত অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার অভিযোগ দায়ের করেন, যেখানে তিনি পরেশ পাল, স্বপন সমাদ্দার ও পাপিয়া ঘোষকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেন। অভিযোগে খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করা হয়।

জামিনের আবেদন ও শুনানি

এই মামলায় দীর্ঘদিন ধরেই আইনি লড়াই চলছিল। অভিযুক্ত তিন নেতা আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত সেই আবেদনের শুনানি করেন। উভয় পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর আদালত রায় দেয়, তদন্তের স্বার্থে তাঁদের জামিন শর্তসাপেক্ষে মঞ্জুর করা হচ্ছে।

আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, অভিযুক্তরা তদন্তে সহযোগিতা করবেন। প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা বা সাক্ষীদের প্রভাবিত করার মতো কোনো পদক্ষেপ তাঁরা নিতে পারবেন না। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে তদন্তকারী অফিসারের ডাকা অনুসারে হাজিরা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Advertisements

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল শিবিরের দাবি, বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁদের নেতাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগাম জামিনের এই সিদ্ধান্তে কিছুটা স্বস্তি পেল শাসকদল। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার জন্য বারবার আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে বিজেপি, কিন্তু তাতে শেষ পর্যন্ত সুবিধা কিছু হচ্ছে না।

অন্যদিকে বিজেপি শিবিরের অভিযোগ, আদালত জামিন দিলেও আসল সত্য সামনে আসবে তদন্তের মাধ্যমেই। বিশ্বজিৎ সরকারের বক্তব্য, “আমার ভাইকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে খুন করা হয়েছে। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আদালতের সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান করি। তবে চাই দ্রুত বিচার হোক, দোষীরা যেন শাস্তি পায়।”

আইনি গুরুত্ব

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, হাই কোর্টের এই রায়ে স্পষ্ট বার্তা রয়েছে। জামিন মানে অভিযুক্তরা নির্দোষ—এমন নয়। শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত চলাকালীন তাঁদেরকে শর্তসাপেক্ষে মুক্ত থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে, মামলার প্রমাণাদি সংগ্রহের জন্য অভিযুক্তদের আটক রাখা প্রয়োজন নেই। তবে যেকোনো ধরনের বেআইনি পদক্ষেপ প্রমাণিত হলে জামিন খারিজও হতে পারে।