গগনযান মিশনের প্রথম মানববিহীন উৎক্ষেপণ ডিসেম্বরে, সঙ্গে থাকছে অর্ধেক-মানবাকৃতি ভায়োমমিত্রা

নয়াদিল্লি: ভারতের মানব মহাকাশ অভিযানের প্রথম ধাপ গগনযান মিশন এবার চূড়ান্ত পর্যায়ে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)-র চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে…

গগনযান মিশনের প্রথম মানববিহীন উৎক্ষেপণ ডিসেম্বরে, সঙ্গে থাকছে অর্ধেক-মানবাকৃতি ভায়োমমিত্রা

নয়াদিল্লি: ভারতের মানব মহাকাশ অভিযানের প্রথম ধাপ গগনযান মিশন এবার চূড়ান্ত পর্যায়ে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)-র চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণ করা হবে গগনযান মিশনের প্রথম মানববিহীন যান—‘জি-১’। এ মিশনে থাকবে অর্ধেক মানবাকৃতি রোবট ভায়োমমিত্রা (Vyommitra), যা মহাকাশযানের ভেতরে বিভিন্ন পরিস্থিতি পরীক্ষা করবে এবং মহাকাশচারীদের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে।

ভি. নারায়ণন বলেন, “ডিসেম্বরে প্রথম মানববিহীন মিশন উৎক্ষেপিত হবে। গগনযান মিশনে ভায়োমমিত্রা উড়বে এবং মহাকাশে যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করবে।” একইসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে জানান, ২০১৮ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ থেকে গগনযান কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে এই মিশনকে কেন্দ্র করে এক বিশাল পরিকল্পনা ও গবেষণা এগিয়ে এসেছে।

   

গগনযান মিশনের গুরুত্ব

গগনযান ভারতের প্রথম মানব মহাকাশযান কর্মসূচি। এর মাধ্যমে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতীয় মহাকাশচারীদের মহাশূন্যে পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সফলভাবে মিশন সম্পন্ন করেছেন—যা কোনও ভারতীয় মহাকাশচারীর ক্ষেত্রে প্রথম। তিনি নির্বাচিত গগনযাত্রীদের মধ্যে অন্যতম, যারা ভবিষ্যতে মানব-সহ গগনযান মিশনে অংশ নেবেন।

ভায়োমমিত্রা—এক অভিনব পদক্ষেপ

ভায়োমমিত্রা অর্ধেক-মানবাকৃতি রোবট, যা মানুষের মতো দেখতে এবং কথা বলতে সক্ষম। এটি মহাকাশযানে গিয়ে কেবিনের পরিবেশ, তাপমাত্রা, চাপ, আর্দ্রতা ইত্যাদি তথ্য রেকর্ড করবে। পাশাপাশি, মানব মস্তিষ্কের মতো প্রশ্নোত্তর চালাতে পারে। ফলে বাস্তবে মহাকাশচারী না থাকলেও, যন্ত্রটি তাঁদের অভিজ্ঞতার মতো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারবে। এইভাবে মহাকাশযানের নিরাপত্তা ও যাত্রী পরিবেশের উপযোগিতা পরীক্ষা হবে।

Advertisements

ইসরো প্রধান জানান, গত চার মাসে ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। প্রায় ২০,০০০ কর্মী, ৪৫০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ৩০০ একাডেমিক সংস্থার সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যাচ্ছে প্রকল্পটি। আজ দেশের জন্য টেলিমেডিসিন, টেলি-এডুকেশন, টিভি সম্প্রচার থেকে শুরু করে প্রায় ৮,৬০০ ট্রেন ও ২১,০০০ জাহাজে রিয়েল-টাইম কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করেছে ইসরো।

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে ১৩টি ক্ষেত্রে সরাসরি অবদান রাখছে ভারতীয় মহাকাশ প্রযুক্তি। বিশেষ করে দুর্যোগ পূর্বাভাসে ইসরোর অবদান প্রশংসনীয়।

ইসরোর অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাফল্য হলো আদিত্য এল১ (সূর্য মিশন)। ২০২৫ সালে ইতিমধ্যেই ১৩ টেরাবিট ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সূর্যের অসাধারণ ছবি পাঠিয়েছে স্যাটেলাইটটি। অন্যদিকে, নাসার সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি ‘নিসার’ (NISAR) স্যাটেলাইটও সফলভাবে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট বলা হচ্ছে।

ভি. নারায়ণন আরও জানান, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ভারতের উৎক্ষেপণযানে যুক্তরাষ্ট্রের ৬,৫০০ কেজি ওজনের যোগাযোগ স্যাটেলাইট মহাশূন্যে পাঠানো হবে। এর আগে ভারত মোট ৩৪টি দেশের ৪৩৩টি স্যাটেলাইট মহাশূন্যে পাঠিয়েছে।

গগনযান মিশনের প্রথম ধাপ, অর্থাৎ মানববিহীন উৎক্ষেপণ, ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন ইতিহাস তৈরি করতে চলেছে। ভায়োমমিত্রার উপস্থিতি কেবল প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ নয়, মানব মহাকাশ যাত্রার প্রস্তুতির দিক থেকেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ মিশনের সাফল্য ভবিষ্যতে ভারতীয় মহাকাশচারীদের নিরাপদ মহাশূন্য অভিযানের ভিত্তি গড়ে তুলবে।