রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Putin) প্রতিনিধি দলকে আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলনের সময় তিনটি জেট বিমানে জ্বালানি ভরার জন্য প্রায় ২৫০,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২.২ কোটি টাকা) নগদে পরিশোধ করতে হয়েছে।
মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও এনবিসি নিউজকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ান প্রতিনিধি দল মার্কিন ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেনি। ফলে তাদের নগদ অর্থে জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নিয়ে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে।
১৫ আগস্ট পুতিন আলাস্কার অ্যাঙ্করেজে ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার জন্য পৌঁছান। তাঁকে লাল গালিচা দিয়ে স্বাগত জানানো হয়, এবং মার্কিন বিমানবাহিনীর চারটি ফাইটার জেট তাঁর বিমানকে এসকর্ট করে।
তবে, এই উষ্ণ অভ্যর্থনা সত্ত্বেও, তাঁর প্রতিনিধি দলকে জ্বালানির জন্য নগদ অর্থ প্রদান করতে হয়, কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ান কর্মকর্তাদের ব্যাংকিং সিস্টেমে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে।
রুবিও বলেন, “রাশিয়ানরা যখন আলাস্কায় অবতরণ করে, তখন তাদের বিমানে জ্বালানি ভরার জন্য নগদে অর্থ দিতে হয়েছিল, কারণ তারা আমাদের ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে না।”
এই সম্মেলন প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির জন্য কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়। ট্রাম্প এবং পুতিন উভয়েই আলোচনাকে “উৎপাদনশীল” বলে বর্ণনা করলেও, কোনো নির্দিষ্ট ফলাফল ছাড়াই সম্মেলনটি শেষ হয়।
ট্রাম্প জানান, “কোনো চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই,” এবং তিনি ন্যাটো মিত্রদের এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এই বিষয়ে ব্রিফ করবেন। পুতিন আলোচনাকে “গঠনমূলক” বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, কিয়েভ ছাড়াও বাণিজ্য, আর্কটিক এবং মহাকাশে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
রুবিও আরও জানান, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রাশিয়ার উপর প্রতিদিনই পড়ছে। তিনি বলেন, “প্রতিদিন তারা এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছে, কিন্তু এটি যুদ্ধের দিক পরিবর্তন করেনি।” তিনি বলেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও পুতিনকে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতির জন্য বাধ্য করা যাবে না, কারণ “নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে কয়েক মাস বা বছর লাগে।” রাশিয়ান প্রতিনিধি দল এবং তাদের সঙ্গে থাকা সাংবাদিকরাও জানিয়েছেন, তারা আলাস্কায় থাকাকালীন স্থানীয় মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করতে পারেননি।
এই ঘটনা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কঠোরতা এবং রাশিয়ার উপর এর প্রভাবের একটি বাস্তব উদাহরণ। আলাস্কা সম্মেলনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০ আগস্ট পর্যন্ত কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছিল, যাতে রাশিয়ান কর্মকর্তারা ভ্রমণ করতে পারেন। এর আগে, এপ্রিলে ক্রেমলিনের অর্থনৈতিক দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভের জন্যও এমন ব্যতিক্রম করা হয়েছিল।
এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ অনেকে এটিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে, কেউ কেউ মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা কূটনৈতিক আলোচনায় অপ্রয়োজনীয় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এই সম্মেলনের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে জেলেনস্কি পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকলেও ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
কুস্তিতে প্রজন্মের লড়াই! বাবার স্বপ্ন পূরণ করে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হরিয়ানার মেয়ে তপস্যা
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। পুতিনের প্রতিনিধি দলের এই অভিজ্ঞতা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপক প্রভাবের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে, যদিও এটি ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারেনি।