বিহারের নাওয়াদা জেলায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’র সময় তাঁর গাড়ির ধাক্কায় এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হওয়ার ঘটনায় গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
এই ঘটনা গত ১৯ আগস্ট, মঙ্গলবার, নাওয়াদার ভগত সিং চকে ঘটে, যখন রাহুল গান্ধী ও মহাগাঠবন্ধনের অন্যান্য নেতারা এই যাত্রায় অংশ নিচ্ছিলেন। ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, এবং এটি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
নাওয়াদার পুলিশ সুপার অভিনব ধীমান জানিয়েছেন, কনস্টেবল ভিড়ের মধ্যে হোঁচট খেয়ে রাহুল গান্ধীর গাড়ির সামনে পড়ে যান, এবং গাড়ির চাকা তাঁর পায়ে সামান্য ঘষে যায়। তিনি স্পষ্ট করেছেন, “কনস্টেবল গাড়ির নিচে পড়েননি।
তিনি একটি মাইনর ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছেন, এবং তাঁর পায়ের এক্স-রে করা হবে যাতে আঘাতের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়।” তবে, পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কনস্টেবলের পায়ে ফ্র্যাকচার ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার পর রাহুল গান্ধী, যিনি ওপেন-টপ জিপে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তৎক্ষণাৎ তাঁর সমর্থকদের আহত কনস্টেবলকে গাড়িতে তুলে আনতে বলেন। তিনি কনস্টেবলকে পানি দিয়ে সাহায্য করেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, আহত কনস্টেবল খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটছেন, এবং পরে তাঁকে গাড়িতে বসানো হয়। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র হয়েছে। বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা এক্স-এ একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করেছেন, “রাহুল গান্ধীর গাড়ি একজন পুলিশ কনস্টেবলকে ‘চাপা’ দিয়েছে, যিনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। তিনি এমনকি গাড়ি থেকে নেমে তাঁর খোঁজ নেননি।”
তিনি ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’কে ‘ক্রাশ জনতা যাত্রা’ বলে কটাক্ষ করেছেন। এই অভিযোগের জবাবে বিহার কংগ্রেসের মুখপাত্র আসিত নাথ তিওয়ারি বলেন, “বিজেপি নেতারা মিথ্যা প্রচারের জন্য পরিচিত। যাত্রার সাফল্যে তারা ঈর্ষান্বিত, তাই এই ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে।” তিনি জানান, রাহুল গান্ধী নিজে আহত কনস্টেবলের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।
‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ গত ১৭ আগস্ট সাসারাম থেকে শুরু হয়েছে। এই ১৬ দিনের যাত্রা বিহারের ২৫টি জেলা কভার করে ১,৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে এবং আগামী ১ সেপ্টেম্বর পাটনায় একটি সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে।
এই যাত্রার মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কথিত অনিয়ম, বিশেষ করে ভোটার তালিকার বিশেষ গভীর সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপি মিলে বিহারে ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার মাধ্যমে ‘ভোট চুরি’ করছে।
এই ঘটনার পর পুলিশ গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে, যদিও চালকের নাম এবং অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি। নাওয়াদার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে এবং শীঘ্রই আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে। এই ঘটনা বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিজেপি নেতা দিলীপ জয়সওয়াল বলেন, “বিহারের জনগণ রাহুল গান্ধীর এই যাত্রা থেকে দূরে থেকেছে, কারণ তারা জানে সুপ্রিম কোর্ট এবং নির্বাচন কমিশন তাদের ভোটাধিকার রক্ষা করবে।”
কংগ্রেস নেতা রঞ্জিত রঞ্জন জানিয়েছেন, “পুরো বিরোধী দল রাহুল গান্ধীর সঙ্গে রয়েছে। আমাদের এই যাত্রা ভোট চুরির বিরুদ্ধে একটি সচেতনতামূলক প্রচার।” তিনি নির্বাচন কমিশনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কমিশনের সংবাদ সম্মেলনেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এই ঘটনা এবং এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বিহারের নির্বাচনী পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ধর্ষণের ভুয়ো মামলা সাজিয়ে সওয়াল, আইনজীবীকে যাবজ্জীবন সাজা আদালতের
এই যাত্রায় রাহুল গান্ধীর সঙ্গে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, সিপিআই (এমএল)-এর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সহ মহাগাঠবন্ধনের অন্যান্য নেতারা রয়েছেন। যাত্রাটি হাইব্রিড মোডে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে পদযাত্রার পাশাপাশি যানবাহনও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ঘটনা সত্ত্বেও, কংগ্রেস এবং তাদের মিত্ররা যাত্রা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।