দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তাকে (CM Rekha Gupta) এখন থেকে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (CRPF) সুরক্ষা দেবে। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব দিল্লি পুলিশ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে, আর কারণ ২০শে আগস্ট ঘটে যাওয়া এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রীর সিভিল লাইনস ক্যাম্প অফিসে জনসুনবাই চলাকালীন জনসাধারণের একজন হিসেবে উপস্থিত হয়ে এক ব্যক্তি হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বসেন। এরপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তড়িঘড়ি করে ‘জেড’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা নাগরিকদের অভিযোগ শুনছিলেন। ঠিক সেই সময় গুজরাটের বাসিন্দা রাজেশ কিমজি সাকারিয়া নামের এক ব্যক্তি অভিযোগকারী সেজে সামনে আসেন। প্রথমে তিনি সাধারণ নাগরিকের মতো কথা বললেও হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ধেয়ে যান এবং তাঁকে আক্রমণের চেষ্টা করেন। উপস্থিত নিরাপত্তা কর্মীরা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেন এবং অভিযুক্তকে আটক করা হয়।
পরে জানা যায়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গুজরাটে একাধিক অপরাধমূলক মামলা রয়েছে। যদিও বেশ কয়েকটি মামলায় সে খালাস পেয়েছে, তবে পুলিশ তাকে “সিরিয়াল অপরাধী” বলে উল্লেখ করেছে। এবার দিল্লি পুলিশ তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির নতুন সংহিতা ভরতি ন্যায় সংহিতা (BNS) এর 109(1) ধারা অনুযায়ী খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেছে।
‘জেড’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা কী?
ভারতে ভিআইপি নিরাপত্তার বিভিন্ন স্তর রয়েছে—এক্স, ওয়াই, ওয়াই-প্লাস, জেড এবং জেড-প্লাস। এর মধ্যে ‘জেড’ ক্যাটেগরি অন্যতম উচ্চস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘ইয়েলো বুক’ অনুযায়ী, এই ক্যাটেগরির সুরক্ষায় প্রায় ২২ থেকে ২৫ জন বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা কর্মী থাকেন।
এই দলে থাকেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার (PSO), সশস্ত্র কমান্ডো, এসকর্ট টিম, ওয়াচার এবং স্থায়ী প্রহরী। নিরাপত্তার ব্যবস্থা কেবল বাসভবন বা অফিসের বাইরে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং ২৪ ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রীর চলাফেরা ও জনসভার প্রতিটি জায়গায় কড়া নজরদারি চালানো হয়।
CRPF-এর কমান্ডোরা এই দায়িত্ব সামলান। তাঁরা অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত এবং একাধিক স্তরে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেন—নিকটতম বডিগার্ড থেকে শুরু করে বাইরের আর্মড রেসপন্স টিম পর্যন্ত। ফলে হুমকি এড়ানো এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব হয়।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা প্রায়ই জনসংযোগ ও জনশুনানি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এতে সাধারণ মানুষের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হলেও নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার উপর আক্রমণ প্রমাণ করেছে যে উচ্চপদস্থ নেতাদের ক্ষেত্রে কেবল রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা যথেষ্ট নয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া প্রোটোকলই তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে।
এই ঘটনার পর দিল্লির রাজনৈতিক মহলেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শাসকদল থেকে শুরু করে বিরোধী দল—সবাই এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে আঘাত করার চেষ্টাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর আঘাত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ইতিমধ্যেই CRPF মোতায়েন হয়েছে। জনসুনবাই বা অন্যান্য গণ-অনুষ্ঠানে নতুন নিরাপত্তা প্রোটোকল চালু করা হয়েছে।
আক্রমণের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তাকে ‘জেড’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা প্রদান নিঃসন্দেহে এক বড় সিদ্ধান্ত। এতে একদিকে যেমন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে যে কোনও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র প্রতিরোধেও এটি কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে।