জয়েন্ট রেজাল্ট ঘিরে আইনি জট, আগামী মাসে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি

রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা (WBJEE) নিয়ে উত্তেজনা, জটিলতা এবং বিভ্রান্তির আবহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। হাজার হাজার পরীক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন তাঁদের স্বপ্নের ফলাফলের জন্য।…

wbjee 2024

রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা (WBJEE) নিয়ে উত্তেজনা, জটিলতা এবং বিভ্রান্তির আবহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। হাজার হাজার পরীক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন তাঁদের স্বপ্নের ফলাফলের জন্য। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে সেই ফলাফল প্রকাশ প্রসঙ্গ নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ শোনা গেল। বিচারপতি সুজয় পাল এবং তাঁর বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সিঙ্গল বেঞ্চ যে রায় দিয়েছে, সেটাই এখানে কার্যকর। নতুন করে কোনও নির্দেশ দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে একপ্রকারে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই কার্যত গুরুত্ব পেল ডিভিশন বেঞ্চে।

বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির সময় জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের আইনজীবী জানান, বোর্ড একেবারেই প্রস্তুত। প্রশ্নপত্র মূল্যায়ন, নম্বর যাচাই, মেধা তালিকা—সবই সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। যে কোনও মুহূর্তে ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব। কিন্তু আদালতে মামলা চলমান থাকায়, তারা আর আইনি অনুমতি ছাড়া ফল প্রকাশ করতে পারছেন না। এই অবস্থায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।

   

বিচারপতি সুজয় পালের পর্যবেক্ষণ, সিঙ্গল বেঞ্চে বিচারপতি কৌশিক চন্দ স্পষ্টভাবে সময়সীমা বেঁধে ফল প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই ডিভিশন বেঞ্চ থেকে আলাদা করে নতুন নির্দেশ জারি করার কোনও প্রয়োজন নেই। আদালতের বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা গেল, ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের প্রতি আস্থা রাখছে এবং সেই রায় কার্যকর করার দিকেই এগোচ্ছে।

এই মামলার সূত্রপাত হয়েছিল মূলত কয়েকজন পরীক্ষার্থীর অভিযোগ থেকে। তাঁদের দাবি, ভর্তি প্রক্রিয়া এবং ফল প্রকাশে কিছু অনিয়ম হয়েছে। বোর্ডের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার ঘাটতির অভিযোগও ওঠে। এই নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা। ফলস্বরূপ, ফল প্রকাশ আটকে যায়। এর ফলে শুধু পরীক্ষার্থীরাই নয়, তাঁদের পরিবারও চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন।

এখন প্রশ্ন উঠছে, কবে প্রকাশিত হবে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলাফল? আদালতের এদিনের মন্তব্য অনুযায়ী, বোর্ড যেহেতু প্রস্তুত, তাই আর বিশেষ বিলম্ব হওয়ার কথা নয়। মামলার পরবর্তী শুনানি ২ সেপ্টেম্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, সিঙ্গল বেঞ্চের রায় অনুযায়ী বোর্ড চাইলে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করতে পারে। এতে পরীক্ষার্থীদের এক বড় অংশ কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন।

Advertisements

পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বলছেন, এতদিন ধরে ছেলেমেয়েরা মানসিক চাপে রয়েছে। স্কুল থেকে কলেজে ওঠার এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তাঁদের পড়াশোনায়ও প্রভাব ফেলছে। এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ফল তো বেরোনোই উচিত ছিল। আদালতে মামলা চলুক, কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের জীবন যেন থমকে না যায়। আমাদের বাচ্চাদের সঙ্গে এমন অবিচার হওয়া উচিত নয়।”

আইনজীবী মহলেও এই মামলার গুরুত্ব যথেষ্ট। আদালতের রায়ের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বোর্ডের হাতে আর কোনও বাধা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে মামলার পক্ষ-বিপক্ষের যুক্তিতর্কে আদালতকে কিছুটা সময় দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল প্রকাশে আর দেরি হলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। কারণ জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলাফলের উপর নির্ভর করে ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মেসি, আর্কিটেকচার ইত্যাদি বহু বিষয়ের কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সব মিলিয়ে, রাজ্যের হাজারো পরীক্ষার্থী এখন তাকিয়ে আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। সিঙ্গল বেঞ্চের রায় কার্যকর হলে খুব শিগগিরই তাঁরা হাতে পেতে চলেছেন তাঁদের প্রতীক্ষিত ফলাফল। তবে মামলা চলমান থাকায় চূড়ান্ত স্বস্তি এখনও অধরা। ডিভিশন বেঞ্চের এদিনের মন্তব্য অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ যাতে অন্ধকারে না থাকে, সে দিকে নজর রেখেই এগোতে চায় আদালত।

এই পরিস্থিতিতে বোর্ডও অপেক্ষায় আছে আদালতের অনুমতির। আদালতের নির্দেশ মেনে তারা ফল প্রকাশ করলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে স্বাভাবিক ছন্দ ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আগামী কয়েক দিনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, রাজ্যের জয়েন্ট পরীক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান কবে হতে চলেছে।