GST সংস্কারের নয়া অধ্যায়, অর্থমন্ত্রীদের সুপারিশের অপেক্ষায় কেন্দ্র

দেশের পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) ব্যবস্থায় বড়সড় সংস্কারের পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। বর্তমান বহুমাত্রিক জিএসটি হারের পরিবর্তে এবার দুটি প্রধান স্ল্যাব—৫% এবং ১৮%—এর প্রস্তাব…

FM Sitharaman Pitches Next-Gen GST Reforms To Aid Common Man, MSMEs

দেশের পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) ব্যবস্থায় বড়সড় সংস্কারের পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। বর্তমান বহুমাত্রিক জিএসটি হারের পরিবর্তে এবার দুটি প্রধান স্ল্যাব—৫% এবং ১৮%—এর প্রস্তাব আনতে চলেছে কেন্দ্র সরকার। এই প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য আজ, বুধবার (২১ আগস্ট), বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীর সভাপতিত্বে ছয় সদস্যের একটি গ্রুপ অফ মিনিস্টারস (GoM) বৈঠকে বসেছে। এই গোষ্ঠীর সুপারিশ চূড়ান্তভাবে জিএসটি কাউন্সিলের কাছে পাঠানো হবে।

আজকের বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত জিএসটি কাঠামো, যেখানে পণ্য ও পরিষেবাগুলিকে ‘মেরিট’ (merit) এবং ‘স্ট্যান্ডার্ড’ (standard) বিভাগে ভাগ করা হবে। তবে, পাপদ্রব্য বা ‘সিন গুডস’-এর ক্ষেত্রে ৪০% হারের শুল্ক বজায় রাখার প্রস্তাব রয়েছে।

   

বর্তমান কাঠামোয় থাকা ১২% হারে করের আওতাধীন বেশিরভাগ পণ্যকে নতুন ৫% স্ল্যাবে স্থানান্তর করা হতে পারে। অন্যদিকে, বর্তমানে ২৮% হারে করযুক্ত বহু পণ্যকে নামিয়ে আনা হবে ১৮% স্ল্যাবে। এর ফলে বাজারে স্বস্তি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ছয় সদস্যের এই গোষ্ঠীতে বিহারের পাশাপাশি কেরল, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ ও কর্ণাটকের অর্থমন্ত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এঁদের সুপারিশই আগামী মাসে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য উত্থাপিত হবে।

এর আগের দিন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করেন ক্ষতিপূরণ সেস, স্বাস্থ্য ও জীবনবিমা এবং রেট র‍্যাশনালাইজেশন নিয়ে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, জিএসটি হার সংস্কার সাধারণ মানুষ, কৃষক, মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পোদ্যোগের (MSME) জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে। একই সঙ্গে কর ব্যবস্থা হবে আরও সরল, স্বচ্ছ এবং উন্নয়নমুখী।

অর্থমন্ত্রীর মতে, “দীর্ঘদিন ধরেই জিএসটি কাঠামো নিয়ে সংস্কারের দাবি উঠছিল। এবার এমন একটি কাঠামো আনা হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির পথে কর ব্যবস্থাকে আরও টেকসই করবে।”

২০১৭ সালে জিএসটি চালুর সময় ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ট্যাক্স, ওয়ান মার্কেট’-এর স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে বহুমাত্রিক করহার এবং খাতভিত্তিক জটিলতা ভোক্তা ও ব্যবসা—উভয়ের জন্যই সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
বর্তমান প্রস্তাব কার্যকর হলে—
ব্যবসার ওপর প্রশাসনিক বোঝা কমবে।
সাধারণ মানুষের পকেট থেকে কর কম কাটা হবে।
পণ্য ও পরিষেবার দাম অনেক ক্ষেত্রে কমতে পারে।
কর আদায়ে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা আসবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ১২% থেকে ৫%-এ নামিয়ে আনা হলে দৈনন্দিন ব্যবহার্য বহু পণ্যের দাম কমতে পারে। অন্যদিকে, ২৮% থেকে ১৮%-এ নামানো হলে গাড়ি, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও টেকসই ভোগ্যপণ্যের বিক্রি বাড়বে।

Advertisements

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউবিএস সিকিউরিটিজের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত জিএসটি সংস্কার ভারতের ভোগ্যপণ্য অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দেবে। সংস্থার চিফ ইন্ডিয়া ইকোনমিস্ট তন্বী গুপ্তা জৈন বলেন, “এই সম্ভাব্য নীতি সংস্কারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত আয়কর ছাড় (১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), সুদের হারে আগাম কাটছাঁট (এই বছর ১০০ বেসিস পয়েন্ট), মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ঋণের সহজলভ্যতা—সব মিলিয়ে আগামী ২-৩ ত্রৈমাসিকে পারিবারিক ভোগব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।”

অন্যদিকে, বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ কর সংস্কার প্রক্রিয়াকে আরও দীর্ঘমেয়াদি দিশা দেবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও MSME খাতের জন্য সরল কর কাঠামো কার্যকর হলে ব্যবসায়িক খরচ কমবে, যা অর্থনীতিকে প্রণোদিত করবে।

এবারই প্রথমবার কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এমন একটি জিএসটি রি-জিগ বা পুনর্গঠন প্রস্তাব এনেছে। এতদিন মূলত গোষ্ঠী ও জিএসটি কাউন্সিলই ধাপে ধাপে পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে।

আগে রেট র‍্যাশনালাইজেশন প্যানেলকে নির্দিষ্ট খাতের উল্টো শুল্ক (inverted duty structure) ও হার সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার কেন্দ্র নিজেই বড় মাপের কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।

আজকের বৈঠকে যদি এই প্রস্তাব গোষ্ঠীর অনুমোদন পায়, তবে সেপ্টেম্বরের বৈঠকে জিএসটি কাউন্সিল সেটি আলোচনা করবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীগণ।

দেশের অর্থনীতি যেমন দ্রুত এগোচ্ছে, তেমনই কর কাঠামোকে সময়োপযোগী করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ী—সবাই এই সংস্কার নিয়ে আশাবাদী। এখন দেখার বিষয়, সেপ্টেম্বর মাসে জিএসটি কাউন্সিল এই প্রস্তাব কতটা বাস্তবায়ন করে।