মাদুরাইয়ে লোকারণ্য! শহর জুড়ে বিজয়ের জয়ধ্বনি

তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করতে প্রস্তুত তামিল সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা ও তামিলাগা ভেট্রি কঝগম (টিভিকে) দলের প্রধান বিজয় (Madurai)। আজ, ২১ আগস্ট, মাদুরাইয়ে…

Madurai rally vijay

তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করতে প্রস্তুত তামিল সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা ও তামিলাগা ভেট্রি কঝগম (টিভিকে) দলের প্রধান বিজয় (Madurai)। আজ, ২১ আগস্ট, মাদুরাইয়ে তাঁর দলের দ্বিতীয় রাজ্য-স্তরের সমাবেশে তিনি ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের দৃঢ় ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।

এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে মাদুরাই শহর সেজে উঠেছে। প্রায় ৫০৬ একর জুড়ে বিস্তৃত এই সমাবেশের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রায় দুই লক্ষ সমর্থকের সমাগম প্রত্যাশিত। নিরাপত্তার জন্য ৫৫০ জন বাউন্সার এবং ৩০০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। এই সমাবেশ টিভিকে-এর প্রথম বড় নির্বাচনী পরীক্ষার পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

   

বিজয় তাঁর দলের কর্মীদের উদ্দেশে একটি উদ্দীপনামূলক চিঠিতে বলেছেন, “২০২৬ সালের নির্বাচন তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট হবে। আমরা তামিলনাড়ুর ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় লিখব।”

তিনি ১৯৬৭ সালে ডিএমকে প্রতিষ্ঠাতা সিএন আন্নাদুরাই এবং ১৯৭৭ সালে এআইএডিএমকে প্রতিষ্ঠাতা এমজি রামচন্দ্রন (এমজিআর)-এর ঐতিহাসিক জয়ের সঙ্গে তুলনা করে এই নির্বাচনকে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ভিজয়ের দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁর দল টিভিকে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে নতুন আকার দেবে।

মাদুরাইয়ের এই সমাবেশে বিজয় তাঁর দলের মতাদর্শ এবং কৌশল তুলে ধরেছেন। তিনি ডিএমকে-কে তাঁর রাজনৈতিক শত্রু এবং বিজেপি-কে মতাদর্শগত শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, তাঁর দল এআইএডিএমকে-র সঙ্গে জোট গঠন করবে না, যেহেতু এআইএডিএমকে বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করেছে।

টিভিকে এখনও এককভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং বিজয় ক্ষমতায় এলে ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, এখনও পর্যন্ত কোনো বড় দল তাঁর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট গঠন করেনি।

টিভিকে-এর এই সমাবেশে আন্নাদুরাই এবং এমজিআর-এর প্রতিকৃতি প্রদর্শন করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে বিজয় তাঁদের উত্তরাধিকারকে তামিলনাড়ুর জনগণের সঙ্গে যুক্ত করতে চান, কোনো একক দলের সঙ্গে নয়। তিনি তাঁর দলের মতাদর্শ হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিয়েছেন, যা পেরিয়ার, আম্বেদকর, কামরাজ, ভেলু নাচিয়ার এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক নেতাদের আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তিনি দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

Advertisements

বিজয়ের এই সমাবেশ তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে তাঁর শক্তিশালী উপস্থিতি প্রদর্শনের একটি মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি রাজ্যব্যাপী সফরের পরিকল্পনা করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি সরাসরি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

টিভিকে ইতিমধ্যেই ২.৯ লক্ষ পদাধিকারী এবং ৬৯,০০০ বুথ এজেন্ট নিয়োগ করেছে এবং ২.৫ কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। তাঁরা ‘মাই টিভিকে’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে, যা ডিজিটাল সদস্য সংগ্রহে সহায়তা করছে।

তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ডিএমকে এবং এআইএডিএমকে-এর আধিপত্য ভাঙা ভিজয়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ডিএমকে-এর নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন তাঁর দলের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো এবং জোট নীতির মাধ্যমে ২০২১ সালে জয়লাভ করেছিলেন। অন্যদিকে, এআইএডিএমকে এবং বিজেপি জোট গঠন করে ২০২৬-এর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছে।

সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এমকে স্টালিন ২৭% সমর্থন নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন, এবং ভিজয় ১৮% সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তবে, এই জরিপের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ডিএমকে এবং বিজেপি এই জরিপকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে সমালোচনা করেছে। তবুও, ভিজয়ের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, তাঁর জনপ্রিয়তা এবং তরুণদের মধ্যে আকর্ষণ তাঁকে ২০২৬ সালে একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাড়ি চুরির কিনারা, পুলিশের জালে ধৃত ৪ অভিযুক্ত

মাদুরাইয়ের এই সমাবেশ তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। বিজয়ের তারকা ক্ষমতা এবং তাঁর দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতি কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলবে। তবে, এই সমাবেশ তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে।