ভারতীয় রেলওয়ে ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল (Solar Panels)। প্রথমবারের মতো, বারাণসীর বানারস লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (বিএলডব্লিউ)-এ রেল ট্র্যাকের উপর সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। এই অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতীয় রেলওয়ে সৌরশক্তির ব্যবহারে আরও একধাপ এগিয়ে গেল, যা দেশের সবুজ পরিবহনের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার পথে একটি মাইলফলক।
এই প্রকল্প কেবল পরিবেশবান্ধব পরিবহনের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রতিশ্রুতিই নয়, বরং ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।বানারস লোকোমোটিভ ওয়ার্কসে স্থাপিত এই সোলার প্যানেলগুলি রেল ট্র্যাকের পাশে এবং নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ট্র্যাকের উপর বিশেষভাবে ডিজাইন করা কাঠামোর মাধ্যমে বসানো হয়েছে।
এই প্যানেলগুলি সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, যা বিএলডব্লিউ-এর বিভিন্ন কার্যক্রম, যেমন লোকোমোটিভ উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত কাজে ব্যবহৃত হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতীয় রেলওয়ে তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাস করার পাশাপাশি জ্বালানি খরচ কমানোর দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে।
ভারতীয় রেলওয়ের এই উদ্যোগ পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, “ভারতীয় রেলওয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো কার্বন এমিশন’ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বারাণসীতে ট্র্যাকের উপর সোলার প্যানেল স্থাপন এই লক্ষ্যের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আমরা কেবল পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ ও টেকসই করতে চাই না, বরং পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাও পালন করতে চাই।” বিএলডব্লিউ-এর এই প্রকল্পে প্রায় ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে, যা বছরে হাজার হাজার টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করবে। এই সৌরশক্তি প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ের জ্বালানি খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, যা অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক।
প্রকল্পটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে রেল ট্র্যাকের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো বাধা না পড়ে। বিশেষভাবে তৈরি কাঠামোর মাধ্যমে সোলার প্যানেলগুলি ট্র্যাকের উপর এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে, এটি ট্রেন চলাচলের কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।এই প্রকল্পের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর স্থানীয় প্রভাব।
বারাণসীর স্থানীয় প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের এই প্রকল্পে নিয়োজিত করা হয়েছে, যা স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও, এই উদ্যোগ ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সোলার প্যানেল ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের বেশিরভাগই ভারতেই তৈরি করা হয়েছে, যা দেশের শিল্প খাতকেও উৎসাহিত করছে।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বারাণসীর এই প্রকল্প ভারতীয় রেলওয়ের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে কাজ করবে।
এর সাফল্যের উপর নির্ভর করে দেশের অন্যান্য রেলওয়ে জোনেও এই ধরনের সোলার প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হবে। ভারতীয় রেলওয়ে ইতিমধ্যেই স্টেশন, রেলওয়ে কোয়ার্টার এবং অন্যান্য অবকাঠামোতে সোলার প্যানেল স্থাপন শুরু করেছে। তবে, ট্র্যাকের উপর সোলার প্যানেল স্থাপন একটি সম্পূর্ণ নতুন ধারণা, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের রেল ব্যবস্থার জন্যও একটি উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।
বারাণসীর স্থানীয় বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এই প্রকল্প কেবল আমাদের শহরের জন্য গর্বের বিষয় নয়, বরং এটি পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও একটি বড় পদক্ষেপ। আমরা চাই এই ধরনের উদ্যোগ আরও বাড়ুক।” ভারতীয় রেলওয়ের এই সাফল্য ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ভুয়ো ওবিসি সার্টিফিকেট! পদ খোয়ালেন তৃণমূল নেত্রী
২০৩০ সালের মধ্যে ভারত সরকারের নেট জিরো লক্ষ্য পূরণে রেলওয়ে বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বারাণসীর এই প্রকল্প ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে সোলার শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পথ প্রশস্ত করবে।এই ঐতিহাসিক উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতীয় রেলওয়ে বিশ্বের সামনে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সবুজ শক্তি ও টেকসই উন্নয়নের এই পথে ভারতীয় রেলওয়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।