বকেয়া কর না দেওয়ায় দিঘায় হোটেল বন্ধের চাঞ্চল্য, আজ বৈঠক

দিঘা এবং শঙ্করপুরের হোটেলগুলির বকেয়া কর (Hotel Tax) আদায় নিয়ে ফের উত্তাল হয়ে উঠল পর্যটন কেন্দ্র দিঘা। বুধবার গভীর রাতে পর্যটক পিছু কর না দেওয়ার…

Luxury Hotel Booking Scam Unfolds Ahead of Durga Puja Festivities

দিঘা এবং শঙ্করপুরের হোটেলগুলির বকেয়া কর (Hotel Tax) আদায় নিয়ে ফের উত্তাল হয়ে উঠল পর্যটন কেন্দ্র দিঘা। বুধবার গভীর রাতে পর্যটক পিছু কর না দেওয়ার অভিযোগে একাধিক হোটেল থেকে অতিথিদের বের করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পর্যটকদের রাতের অন্ধকারে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেওয়ার ঘটনায় যেমন পর্যটকদের ভোগান্তি বাড়ে, তেমনি ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীরাও। বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে প্রশাসন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক বসছে।

দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের (DSDA) নিয়ম অনুযায়ী, হোটেলে আসা প্রত্যেক পর্যটক পিছু ১০ টাকা করে কর জমা করতে হয়। সূত্রের খবর, এই কর নিয়মিতভাবে জমা না করায় একাধিক হোটেলকে বারবার নোটিস পাঠানো হয়েছিল। তবুও কর না দেওয়ায় বুধবার রাতে হঠাৎ করেই দিঘার কয়েকটি হোটেল—শ্যাম সুন্দর আবাস, নয়নতারা সহ মোট তিনটি হোটেলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

   

হঠাৎ এই ঘটনায় মাঝরাতে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন পর্যটকেরা। পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা বহু মানুষকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। এক পর্যটক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা টাকা দিয়ে ঘর বুক করেছি। রাতের অন্ধকারে হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হল কেন? এটা চূড়ান্ত অন্যায়।” পর্যটক হয়রানির ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুশান্ত পাত্র প্রশাসনের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “সরকারি নিয়ম না মানলে আইন-আদালত রয়েছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে পর্যটকদের হোটেল থেকে বের করে দেওয়া এবং তালা ঝোলানো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা বৃহস্পতিবার প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসব। প্রশাসনকে আশ্বাস দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।”

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানিয়েছেন, “দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ আমাকে কিছু না জানিয়ে তালা ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রাতেই তালা খোলা হয়েছে। কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হবে।”

Advertisements

অন্যদিকে, DSDA-র কার্যনির্বাহী আধিকারিক নীলাঞ্জন মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তবে পর্ষদের এক আধিকারিক দাবি করেন, “হোটেলগুলিকে পর্যটক পিছু কর দেওয়ার জন্য একাধিকবার নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর জমা না করায় বাধ্য হয়ে হোটেল বন্ধ করা হয়েছে।”

ঘটনার পর দিঘার হোটেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এইভাবে পর্যটকদের হয়রানি হলে দিঘার ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হবে। তাঁরা সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, যদি প্রশাসন দ্রুত সমাধান না করে, তাহলে নাগরিক মঞ্চ গঠন করে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামবেন ব্যবসায়ীরা।

রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র দিঘায় এই ঘটনা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখা যেমন জরুরি, তেমনি প্রশাসনের নির্দেশ মানা এবং কর জমা দেওয়াও হোটেল মালিকদের দায়িত্ব। বৃহস্পতিবারের বৈঠকের দিকে এখন তাকিয়ে আছে পর্যটন মহল। দেখা যাক, প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছনো যায় কিনা, নাকি পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।