ডায়মন্ড হারবারের লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে ফের রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক তুঙ্গে। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাত লক্ষ ভোটের জয়কে ঘিরে নতুন করে সরব হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) । তাঁর অভিযোগ, এই জয় কোনওভাবেই স্বাভাবিক নয়, বরং সুচারুভাবে সাজানো কারচুপির ফল।
শুভেন্দুর(Suvendu Adhikari) বক্তব্য অনুযায়ী, ডায়মন্ড হারবারের ৯০০-রও বেশি বুথে ভোটগ্রহণের সময়ে ইভিএমে সেলোটেপ লাগানো ছিল। ভোটাররা ভোট দিতে গেলে ভেতরে ৮ জন করে পোলিং এজেন্ট এবং বাইরে জাহাঙ্গির বাহিনীর লোকজন ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছিলেন। শুভেন্দুর কথায়, ভোটাররা যদি ভেতরে গিয়ে আওয়াজ তোলেন যে তাঁরা প্রতীক খুঁজে পাচ্ছেন না, বুথ থেকে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের মারধর করা হতো। আর যদি আওয়াজও না তোলা হয়, তাহলেও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁর দাবি, এইভাবে ভয় দেখিয়ে ও জালিয়াতি করেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাত লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করেছেন।
শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) এই অভিযোগ নিছক রাজনৈতিক আক্রমণ নয়, বরং এর মধ্যেই তিনি তুলে ধরেছেন ভোটব্যবস্থার উপর আস্থার সংকট। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, ভোটারদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারকে নষ্ট করে গোপনে কারচুপি চালানো হয়েছিল। এই অভিযোগের ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়া বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। দলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী সাফ জানিয়েছেন, “এ ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুরও একই ধরনের অভিযোগ করেছিলেন। তখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি স্বয়ং পেনড্রাইভে সমস্ত তথ্য-প্রমাণ নিয়ে অনুরাগ ঠাকুরের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন। আজও পর্যন্ত তার কোনও উত্তর তিনি দিতে পারেননি।” অরূপের তীব্র খোঁচা, “ভোট চোর শুভেন্দুর কাছ থেকে কোনও শিক্ষণীয় বাণী শোনার প্রয়োজন নেই।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে রেকর্ড সাড়ে সাত লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জয়কেই বিজেপি বারবার অস্বাভাবিক বলে দাবি করেছে। কয়েক মাস আগে অনুরাগ ঠাকুর বলেছিলেন, ওই এলাকায় কয়েক লক্ষ ভুয়ো ভোটার রয়েছে। তৃণমূল অবশ্য শুরু থেকেই এই অভিযোগকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং পাল্টা বিজেপির উদ্দেশে পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে।
তবে এদিন শুভেন্দুর(Suvendu Adhikari) (Suvendu Adhikari) অভিযোগ নতুন মাত্রা এনে দিল বিতর্কে। কারণ এবার তিনি শুধু ভোটে কারচুপি নয়, বুথ দখল, ভয় দেখানো, এমনকি শারীরিক নির্যাতনের আশঙ্কার কথাও সরাসরি বললেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিরোধী শিবির লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মানুষের মনে সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে। অন্যদিকে তৃণমূলের বক্তব্য, অভিষেকের জয় মানুষর verdict, তাই তাকে খাটো করার প্রয়াস আসলে জনমতের বিরুদ্ধাচরণ।
এই প্রসঙ্গ ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ ফের উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। ডায়মন্ড হারবারের মানুষজনের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বিজেপি হারের দুঃখ ভুলতে না পেরে বারবার ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। আবার অনেকে মনে করছেন, এত বড় ব্যবধানের জয় সত্যিই অস্বাভাবিক এবং এর পিছনে ভোট-অনিয়মের অভিযোগ অমূলক বলা যায় না।
সব মিলিয়ে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবার জয় নিয়ে শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) এই নতুন অভিযোগ শুধু বিজেপি-তৃণমূল সংঘাতকেই আরও বাড়িয়ে তুলবে না, আসন্ন নির্বাচনগুলোতেও এই বিতর্ককে হাতিয়ার করতে চাইবে বিরোধীরা। আর তৃণমূলও পাল্টা যুক্তি দিয়ে সেই অভিযোগকে রাজনীতির মঞ্চেই আক্রমণাত্মকভাবে খণ্ডন করবে, তাতে সন্দেহ নেই। ফলে, ডায়মন্ড হারবারের ভোটযুদ্ধ এখন আর শুধু অতীতের ঘটনা নয়, বরং রাজ্য রাজনীতির অন্যতম প্রধান বিতর্কের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।