২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নিয়োগ মামলায় ফের নতুন মোড়। স্নাতকে ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া চাকরিরত শিক্ষক–শিক্ষিকারা, যাঁরা সেই সময়কার নিয়োগ প্যানেলে (SSC) ছিলেন কিন্তু ‘টেন্টেটিভ লিস্টে’ নাম ওঠেনি, তাঁদের পক্ষ থেকে নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় বসার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। বৃহস্পতিবার সেই আবেদনে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, আবেদনকারীদের ফর্ম ফিল আপ করার জন্য অতিরিক্ত সাত দিনের সময় দিতে হবে। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি পিছিয়ে যাবে নির্ধারিত নিয়োগ পরীক্ষা?
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, পরীক্ষা পিছোনো বা না–পিছোনোর বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে কমিশনের উপর নির্ভর করছে। কমিশন চাইলে পরীক্ষা নির্ধারিত তারিখে নিতে পারে, আবার চাইলে তা কিছুটা পিছিয়েও দিতে পারে। তবে ফর্ম ফিল আপের ক্ষেত্রে যাঁরা ৪৫ শতাংশ নম্বরের যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করছেন এবং পূর্ববর্তী প্যানেলে ছিলেন, তাঁদের সুযোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। এর পাশাপাশি আদালত একটি নোটিস জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে—এই সংক্রান্ত সমস্ত পক্ষকে নিজেদের মতামত জানাতে হবে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে।
এই রায় সামনে আসার পর থেকেই শিক্ষাজগতে তৈরি হয়েছে প্রবল কৌতূহল ও জল্পনা। কারণ, ইতিমধ্যেই নতুন নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। একাধিক প্রার্থী ফর্ম পূরণ করেছেন এবং নির্ধারিত সময়সূচি মেনেই পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু অতিরিক্ত সাত দিনের সুযোগ পাওয়ার ফলে এই তালিকায় নতুন করে আরও কিছু প্রার্থী যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় নতুন করে পরিবর্তন আনতে হতে পারে। তাই কমিশন পরীক্ষা পিছোবে কি না, সেটাই এখন সবার মুখ্য প্রশ্ন।
অন্যদিকে, শিক্ষকদের একাংশের মতে, এই নির্দেশ ন্যায্য ও প্রয়োজনীয়। কারণ, যাঁরা আগে প্যানেলে ছিলেন, তাঁদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। যদি তাঁরা ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার মান পূরণ করেন, তবে প্রতিযোগিতার মঞ্চে অংশ নেওয়ার অধিকার তাঁদের থাকা স্বাভাবিক। তাঁদের যুক্তি, এতে কাউকে আলাদা করে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না, বরং ন্যায্য সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
তবে আরেক পক্ষের মত, এই সিদ্ধান্তের ফলে আবারও নিয়োগ প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০১৬ সালের নিয়োগ নিয়ে এত বছর ধরে মামলা চলছে, হাজার হাজার শিক্ষক–শিক্ষিকা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। নতুন করে পুরনো বিতর্ক সামনে এলে নিয়োগের গতি আরও মন্থর হয়ে পড়তে পারে। বিশেষত, পরীক্ষার তারিখ যদি পিছিয়ে যায়, তবে বর্তমান প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে।
এখন নজর সকলের কমিশনের সিদ্ধান্তের দিকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ফর্ম ফিল আপে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে বটে, তবে পরীক্ষা কবে হবে—সেটা নির্ভর করছে কমিশনের উপর। আদালতের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে কমিশন স্বাধীন। তাই খুব সম্ভবত আগামী কিছু দিনের মধ্যেই এসএসসি এ নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।
সব মিলিয়ে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসএসসি নিয়োগ। আবেদনকারীদের দাবি পূরণে আদালতের নির্দেশে স্বস্তি এলেও, নতুন করে প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই টানাপোড়েন কবে মিটবে, তা এখন সময়ই বলবে। তবে আপাতত নিশ্চিত, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির বক্তব্য আদালতে পৌঁছাবে, আর তার ভিত্তিতেই আগামী দিনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পথ তৈরি হবে।