কোচবিহার জেলার রাজনৈতিক ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল (Dinesh Chandra Dakua)। গতকাল, ২০ আগস্ট ২০২৫, বুধবার সকালে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা ও কোচবিহারের রাজবংশী সম্প্রদায়ের গর্ব দীনেশ চন্দ্র ডাকুয়া। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
তাঁর প্রয়াণে কোচবিহারের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি ছিলেন একজন সংগ্রামী নেতা, যাঁর জীবন ও কর্ম কোচবিহারের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।দীনেশ চন্দ্র ডাকুয়া কোচবিহারের রাজনীতিতে একটি অমোঘ নাম।
১৯৩০ সালে কোচবিহার জেলার এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই মানুষটি তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনে অসাধারণ উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন।
তিনি ছিলেন সিপিএম (ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি- মার্কসবাদী) নেতা এবং বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল গত শতকের মধ্যভাগে, যখন তিনি ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন।
তাঁর নেতৃত্বে কোচবিহারের রাজবংশী সম্প্রদায়ের অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠার লড়াই এক নতুন মাত্রা পায়।দীনেশ চন্দ্র ডাকুয়া ছিলেন সেই বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন।
তিনি কোচবিহারের গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের উন্নতির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর আমলে কোচবিহারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে শক্তিশালী করেছিল।
বিশেষ করে, তিনি রাজবংশী সম্প্রদায়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উত্থানের জন্য নিরন্তর কাজ করে গেছেন, যা তাঁকে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন প্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল সংগ্রাম ও ত্যাগের এক মহাকাব্য। বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী দীনেশ চন্দ্র ডাকুয়া কখনোই ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য রাজনীতি করেননি।
তিনি সর্বদা গণমানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে কোচবিহারে বামপন্থী আন্দোলন একটি শক্তিশালী ভিত্তি পায়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, রাজনীতি হল সমাজের শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করার একটি মাধ্যম। এই আদর্শ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি।দীনেশ চন্দ্র ডাকুয়ার প্রয়াণে শুধু কোচবিহার নয়, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল শোকাহত।
সিপিএম নেতৃত্ব তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। দলের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দীনেশ চন্দ্র ডাকুয়া ছিলেন আমাদের দলের একটি অমূল্য সম্পদ। তাঁর ত্যাগ ও নিষ্ঠা আমাদের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।” তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কোচবিহারে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শোকসভার আয়োজন করেছে।
তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তবুও তাঁর মনোবল ছিল অটুট। হাসপাতালে থাকাকালীন তিনি তাঁর সহকর্মীদের বলেছিলেন, “আমার জীবনের লড়াই শেষ হয়নি। তোমরা জনগণের জন্য কাজ করে যাও।” এই কথাগুলোই তাঁর জীবনের দর্শনকে প্রতিফলিত করে।দীনেশ চন্দ্র ডাকুয়ার প্রয়াণে তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী ও অগণিত শুভানুধ্যায়ী শোকাহত।
আইটি এবং এফএমসিজির জোরে উর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার, নতুন রেকর্ড সেনসেক্স-নিফটিতে
তিনি তাঁর পিছনে রেখে গেছেন তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও অসংখ্য অনুসারী, যারা তাঁর আদর্শকে বহন করে নিয়ে যাবে। তাঁর শেষযাত্রায় কোচবিহারের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হয়েছেন।দীনেশ চন্দ্র ডাকুয়া ছিলেন কোচবিহারের রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর জীবন ও কর্ম আমাদের সকলের জন্য একটি উদাহরণ।