আইটি এবং এফএমসিজির জোরে উর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার, নতুন রেকর্ড সেনসেক্স-নিফটিতে

ভারতীয় শেয়ারবাজার (Stock Markets) সপ্তাহের শেষ দিকে প্রবল গতি নিয়ে এগোচ্ছে। টানা পাঁচ দিন লাভের ধারা অব্যাহত রাখার পর বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালেই ইঙ্গিত মিলছে…

Stock Market, Sensex, Nifty

ভারতীয় শেয়ারবাজার (Stock Markets) সপ্তাহের শেষ দিকে প্রবল গতি নিয়ে এগোচ্ছে। টানা পাঁচ দিন লাভের ধারা অব্যাহত রাখার পর বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালেই ইঙ্গিত মিলছে ষষ্ঠ দিনের র‍্যালির। মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে প্রায় ২০০ পয়েন্ট লাফিয়ে ৮২,০৮৩–এ পৌঁছেছে। অপরদিকে, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নিফটি৫০ সূচকও ৫০ পয়েন্টের বেশি বেড়ে ২৫,১০০–র ওপরে অবস্থান করছে।

এর আগেই প্রি-ওপেন সেশনে দুই সূচকেই দেখা গিয়েছিল উল্লেখযোগ্য গতি। সকাল ৯টা ৪ মিনিট নাগাদ সেনসেক্স প্রায় ২৫০ পয়েন্ট বেড়ে ৮২,১৩০ ছুঁয়েছিল। একই সময়ে নিফটি প্রায় ৭৫ পয়েন্ট যোগ করে ২৫,১০০–এর ওপরে পৌঁছে যায়।

   

গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স টেক-সিটির গিফট নিফটিও ইতিবাচক প্রবণতা দেখিয়েছে। সকাল ৯টা ৩ মিনিটে সূচকটি প্রায় ৫০ পয়েন্ট বেড়ে ২৫,১৩১–এ পৌঁছেছিল। এর ফলে দিনের শুরুর আগেই বাজারে জোরালো আশাবাদের পরিবেশ তৈরি হয়।

এর আগে বুধবার (২০ আগস্ট) ভারতীয় ইক্যুইটি সূচক দুটোই সবুজে শেষ করেছিল। আইটি এবং এফএমসিজি সেক্টরে ধারাবাহিক ক্রয়ের কারণে বাজারে গতি বজায় ছিল। সেনসেক্স ২১৩.৪৫ পয়েন্ট বা ০.২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮১,৮৫৭.৮৪–এ বন্ধ হয়। ৩০টি সূচকভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ১৫টি লাভে শেষ করলেও বাকি শেয়ারগুলি পতনে যায়।

নিফটি সূচকও স্থিতিশীল থেকেছে। সূচকটি ৬৯.৯০ পয়েন্ট বা ০.২৮ শতাংশ বেড়ে ২৫,০৫০.৫৫–এ শেষ করেছে। এইভাবে টানা পাঁচ দিন ধরে বাজারে উত্থানের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।

জিওজিত ইনভেস্টমেন্টস–এর রিসার্চ হেড বিনোদ নায়ার জানিয়েছেন— “ভারতীয় বাজার শক্তিশালী ঘরোয়া বিনিয়োগ প্রবাহ এবং অনুকূল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ইতিবাচক গতি ধরে রেখেছে। তবে উচ্চ মূল্যায়ন এবং বাইরের ঝুঁকি এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। বিশেষত, মার্কিন শুল্কনীতি এবং রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনায় নিষেধাজ্ঞা বিষয়গুলি বাজারে চাপ তৈরি করতে পারে। সুতরাং, মার্কিন বাণিজ্যনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা এবং আয় পুনরুদ্ধারের পথ কতটা স্পষ্ট হয়, সেটাই মূল বিষয়।”

তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা আপাতত অপেক্ষা করছেন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের মিটিং মিনিটস প্রকাশের জন্য। এর পাশাপাশি, ওয়াইওমিংয়ের জ্যাকসন হোল সিম্পোজিয়ামে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের আসন্ন বক্তব্য বাজারের ভবিষ্যৎ গতিপথ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিতে পারে।

Advertisements

বুধবারের বাজারে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) এবং ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) খাতের শেয়ারগুলি মূল ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ইনফোসিস, টিসিএস, এইচসিএল টেক প্রভৃতি আইটি স্টক এবং হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, নেসলে ইন্ডিয়া, আইটিসি ইত্যাদি এফএমসিজি শেয়ার ক্রয়ের জোয়ারে এগিয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি বাজারে ধীরগতি থাকা সত্ত্বেও এই খাতগুলির শক্তিশালী আয় ও টেকসই চাহিদা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে।

টানা উত্থান বিনিয়োগকারীদের মনোবল বাড়ালেও অনেকেই এখনো সতর্ক। বাজারে তীব্র ওঠানামা (ভোলাটিলিটি) অব্যাহত থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতীয় বাজারকেও প্রভাবিত করতে পারে।

১. উচ্চ মূল্যায়ন ঝুঁকি – শেয়ারবাজারের অনেক সূচক ও শেয়ার বর্তমানে উচ্চ মূল্যে লেনদেন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা আরও কেনাকাটা করলে অতিমূল্যায়নের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
২. মার্কিন শুল্কনীতি ও রাশিয়ান তেল নিষেধাজ্ঞা – আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত ভারতীয় আমদানি ব্যয় বাড়াতে পারে।
৩. ফেড রিজার্ভের নীতি – সুদের হারে পরিবর্তন হলে বৈদেশিক তহবিল প্রবাহে টান পড়তে পারে।
৪. ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি – রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা ইত্যাদি বিশ্ববাজারকে অস্থির রাখতে পারে।

তবুও ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি শক্তিশালী থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ভারতের প্রতি আগ্রহী। ব্যাংকিং, অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং ডিজিটাল খাতে নতুন বিনিয়োগ আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ঘরোয়া তহবিল প্রবাহ এবং কর্পোরেট আয়ের উন্নতি ভারতীয় শেয়ারবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে দৃঢ় রাখবে।

সেনসেক্স ও নিফটির নতুন উচ্চতায় পৌঁছনো নিঃসন্দেহে বিনিয়োগকারীদের কাছে উৎসাহব্যঞ্জক। তবে স্বল্পমেয়াদে বাজারে চাপ ও সংশোধনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষজ্ঞরা তাই পরামর্শ দিচ্ছেন, বিনিয়োগকারীদের উচিত সতর্কভাবে পোর্টফোলিও তৈরি করা এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যকে প্রাধান্য দেওয়া।

আসন্ন দিনগুলিতে মার্কিন ফেডের সিদ্ধান্ত, জেরোম পাওয়েলের বক্তব্য এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতিই নির্ধারণ করবে ভারতীয় শেয়ারবাজারের পরবর্তী গতি।