ধর্মতলা আবারও সাক্ষী রইল রাজনৈতিক অস্থিরতার। বুধবার ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত নানা অভিযোগ ও প্রশাসনের ভূমিকার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন আইএসএফ (ISF) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। এদিন পুলিশ তাঁকে আটক করে নিয়ে যায় লালবাজারে। স্বাভাবিকভাবেই দলের নেতা গ্রেপ্তার হতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আইএসএফ শিবির। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাড়োয়া–রাজারহাট রোডে নেমে আসেন হাজারো কর্মী-সমর্থক। তাঁরা পথ অবরোধ করে নওশাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। ফলে ওই অঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্তব্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
নওশাদের গ্রেপ্তারি ঘিরে ক্ষোভ
গত কয়েক মাস ধরেই ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। বেআইনি দখল, দুর্নীতি এবং স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছে। নওশাদ সিদ্দিকি সেই বিষয়টি নিয়ে বারবার রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন। তাঁর দাবি, ওয়াকফ বোর্ডের কার্যকলাপ নিয়ে সরকার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে চাইছে না। বুধবার ধর্মতলায় সেই দাবিতেই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন তিনি। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন বিক্ষোভটিকে অনুমতি ছাড়া এবং জনজীবনে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ তুলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনার পর আইএসএফ নেতৃত্ব ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানিয়েছে, ‘‘সরকার বিরোধী কণ্ঠরোধ করতে চাইছে। নওশাদকে ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না।’’ দলের তরফে বৃহস্পতিবার সকালেই রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।
রাজারহাটে অবরোধে অচলাবস্থা
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাড়োয়া–রাজারহাট রোডে ভিড় জমতে থাকে। আইএসএফ কর্মীরা হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে রাস্তা আটকে বসে পড়েন। তাঁদের স্লোগান, “নওশাদকে মুক্তি দিতে হবে, গণতন্ত্র বাঁচাতে হবে।”
ফলে অফিস যাত্রার সময় থেকেই সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ। বহু গাড়ি আটকে পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। রাজারহাট, দমদম, বারাসতগামী বাস ও প্রাইভেট গাড়িগুলি আটকে যায়। পুলিশের তরফে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা হলেও কর্মীরা দাবি তোলেন, নওশাদের মুক্তির আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে।
পুলিশের সঙ্গে কর্মীদের ধস্তাধস্তি
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরোধ চলতে থাকায় শেষপর্যন্ত বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কর্মীদের সরাতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আইন ভাঙলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে আইএসএফ নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এটি কেবল শুরু, নওশাদ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
নওশাদের গ্রেপ্তারিকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বিরোধী শিবিরও সমালোচনায় সরব। কংগ্রেস ও সিপিএমের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, গণতান্ত্রিকভাবে বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার রয়েছে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের। অথচ পুলিশ সেই অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে শাসক দলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, নওশাদের নেতৃত্বে আইএসএফ পরিস্থিতি অস্থির করতে চাইছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে।