কলকাতায় বাংলাভাষী ছাত্রদের উপর হামলা, উঠল বাংলাদেশি তকমার অভিযোগ

কলকাতা মহানগরীতে ফের এক নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটল। এতদিন পরিযায়ী শ্রমিকদের মুখে বারবার শোনা যেত ভিনরাজ্যে হেনস্থার অভিযোগ। তাঁদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে মারধরের অভিযোগও…

Sealdah Businessman Accused of Assaulting Calcutta University Students, Allegedly Calling Them ‘Bangladeshi’

কলকাতা মহানগরীতে ফের এক নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটল। এতদিন পরিযায়ী শ্রমিকদের মুখে বারবার শোনা যেত ভিনরাজ্যে হেনস্থার অভিযোগ। তাঁদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে মারধরের অভিযোগও উঠেছিল বহুবার। কিন্তু এবার সেই অভিযোগের ছায়া নেমে এল খাস কলকাতাতেই। অভিযোগ, শিয়ালদহ ব্রিজের নীচে ব্যবসায়ীদের একাংশ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের (Calcutta University Students) বাংলাদেশি বলে কটূক্তি করেন, এমনকি ধারাল অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাঁদের উপর চড়াও হন। ঘটনায় চারজন ছাত্র গুরুতরভাবে আহত হন।

আহত ছাত্রদের প্রথমে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা করানোর পর তাঁরা মুচিপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। থানার বাইরে বসে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান আক্রান্তরা। তাঁদের দাবি, অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। যদিও পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেছে কি না, সে বিষয়ে কোনো সরকারি তথ্য জানানো হয়নি।

   

আক্রান্ত ছাত্রদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল খুবই সাধারণ কারণে। তাঁদের একজন শিয়ালদহের একটি দোকান থেকে মোবাইলের কভার কিনতে গিয়েছিলেন। সেই সময় দোকানের বিক্রেতা, যিনি হিন্দিভাষী বলে দাবি করা হয়েছে, ওই ছাত্রকে হিন্দিতে গালিগালাজ করতে থাকেন। বাংলা ভাষায় উত্তর দেওয়ায় তাঁকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই পড়ুয়ার উপর হামলা চালানো হয়। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে মেরে ফেলা হয় এবং তাঁর মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, তাঁদের মধ্যে একজনকে আটকে রাখার চেষ্টাও হয়েছিল।

পরবর্তীতে আক্রান্ত ছাত্র হস্টেলে(Calcutta University Students) ফিরে গিয়ে সহপাঠীদের নিয়ে আবারও ওই দোকানে যান। তখন আশপাশের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী তাঁদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পড়ুয়াদের দাবি, হামলাকারীদের কাছে ধারাল অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। সেই অস্ত্র ব্যবহার করেই চারজন ছাত্রকে গুরুতর আঘাত করা হয়।

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়ার ঝড় ওঠে। বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, “শিয়ালদহ মানে গেটওয়ে অফ কলকাতা। সেখানে যদি ছাত্রদের(Calcutta University Students) বাংলাদেশি বলে আক্রমণ করা হয়, তবে তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত।” অন্যদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটা ধিক্কার জানিয়েও শেষ করা যায় না। আগে ভিন রাজ্যে এমন ঘটনা ঘটত। কিন্তু এখন কলকাতার বুকে এই পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা।”

বাংলা পক্ষের নেতা গর্গ চট্টোপাধ্যায়ও মুচিপাড়া থানায় আসেন। তিনি আক্রান্ত পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পুলিশের কাছে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানান। তাঁর কথায়, “আমরা গুজরাটে মার খাব, রাজস্থানে মার খাব, এখন কলকাতাতেও মার খাব? কলকাতায় তো বিজেপি সরকার নেই। তাহলে এই অপরাধীরা গ্রেফতার হচ্ছে না কেন? পুলিশ যদি ব্যবস্থা না নেয় তবে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”

Advertisements

আক্রান্ত ছাত্রদের (Calcutta University Students) বক্তব্যেও আতঙ্ক স্পষ্ট। একজন ছাত্র জানান, “আমাকে হিন্দিতে বলল, বাংলাদেশি বলব। কী করবি বল? কী করার আছে কর। এরপর আমায় মেরে মোবাইল কেড়ে নিল।” আরেকজন ছাত্র জানান, “আমাদের কিছু ছেলে মোবাইলের কভার কিনতে গিয়েছিল। তখনই দোকানদার বাংলাদেশি বলে গালিগালাজ করে। প্রতিবাদ করায় আমাদের উপর ছুরি-বন্দুক নিয়ে হামলা হয়।”

এই ঘটনার জেরে কলেজপড়ুয়াদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, শুধু ভিন রাজ্যে নয়, এখন নিজের রাজ্যের রাজধানীতেও ছাত্রদের নিরাপত্তা নেই। প্রশ্ন উঠছে, যদি পড়াশোনার জন্য কলকাতা আসা ছাত্ররা এভাবে আক্রান্ত হন, তবে তাঁদের মানসিক নিরাপত্তা কোথায়?

অভিযুক্তদের এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়ায় ছাত্র মহলের ক্ষোভ আরও বাড়ছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই মনে করছেন, যদি কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে এই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। ছাত্ররা ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা হলে বড় আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।

ঘটনার তদন্ত এখন পুলিশের হাতে। তবে এই ঘটনায় একটি স্পষ্ট বার্তা উঠে এসেছে—বাংলাদেশি বলে তকমা দেওয়ার রাজনীতি শুধু ভিনরাজ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তার প্রভাব এখন কলকাতার বুকেও পৌঁছে গেছে। আর তার ফল ভোগ করছেন নিরীহ পড়ুয়ারা।