Indian ministers resignation law
নয়াদিল্লি: ভারতীয় গণতন্ত্রে দুর্নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল কেন্দ্র। সংসদে পেশ হয়েছে তিনটি যুগান্তকারী বিল, যেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে-যদি কোনও প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ৩০ দিনের মধ্যে জামিন না পান, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁদের পদ খোয়াতে হবে। তবে আদালত থেকে জামিন মিললে পুনর্বহালের সুযোগ থাকবে।
শাহের জবাব ও কেজরিওয়াল প্রসঙ্গ
লোকসভায় আলোচনার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১০ সালে সোহরাবুদ্দিন শেখ মামলায় সিবিআই গ্রেপ্তার করার আগে গুজরাটের গৃহমন্ত্রী পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল দাবি করেছিলেন শাহ নাকি ইস্তফা দেননি। তাতে সরাসরি জবাব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মূল প্রেক্ষাপট হল দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ঘটনা। দীর্ঘ মাস কারাগারে কাটিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর পদ আঁকড়ে থাকার নজিরকে কেন্দ্র বড় রাজনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে। জামিনের পরে পদত্যাগ করলেও ভোটে তাঁর দলকে বড় ধাক্কা খেতে হয়েছে।
আইনের সঙ্গে নৈতিকতার সংঘাত Indian ministers resignation law
এখানেই উঠছে সাংবিধানিক প্রশ্ন। আইনের মূল নীতি বলছে—দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ অপরাধী নন। তাহলে শুধুমাত্র গ্রেপ্তার ও জামিন না মেলার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করা কি ন্যায়সঙ্গত? আবার কেন্দ্রের যুক্তি, সাংবিধানিক পদে থেকে জেলবন্দি অবস্থায় দায়িত্ব পালন কার্যত অচল হয়ে যায়। দিল্লিতে কেজরিওয়ালের কারাবাসের সময় প্রশাসনিক অচলাবস্থাই তার বড় উদাহরণ।
তামিলনাড়ুর মন্ত্রী সেন্টিল বালাজি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছিল, পদে থেকে জামিনে ছাড়া পেলে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। “পদ আর স্বাধীনতার মধ্যে আপনাকে বেছে নিতে হবে”—এই মন্তব্যই তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও ইডির গ্রেপ্তারের আগে ইস্তফা দিয়ে পরে জামিনে ফিরে আসেন।
সংসদীয় পথে কঠিন পরীক্ষা
এই প্রস্তাব আইন করতে হলে সাংবিধানিক সংশোধন প্রয়োজন। অর্থাৎ সংসদে উপস্থিত সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন অপরিহার্য। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত আইনি লড়াই চালাবে। তাঁদের অভিযোগ, ইডি ও সিবিআইকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে কেন্দ্র। ফলে সংসদীয় কমিটি থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত এই লড়াই দীর্ঘ ও জটিল হতে চলেছে।
২০১৩-র রায়ের পরে নতুন মাইলফলক?
২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়েছিল-কোনও সাংসদ বা বিধায়ক যদি ন্যূনতম দুই বছরের সাজায় দোষী সাব্যস্ত হন, তবে সঙ্গে সঙ্গে সদস্যপদ খারিজ হবে। ইউপিএ সরকার সেই রায় বাতিল করতে চাইলে রাহুল গান্ধীর বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। তার ফলেই লালু প্রসাদ যাদব ভোটে লড়ার অধিকার হারান।
যদি নতুন বিল সংসদ ও আদালতের সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তবে এটি হবে দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ে রাজনৈতিক শ্রেণির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। তবে তার আগে কেন্দ্রকে পার হতে হবে বিরোধীদের প্রবল প্রতিবাদ, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরীক্ষা এবং সর্বোচ্চ আদালতের কড়া পর্যবেক্ষণের জটিল পথ।
Bharat: India’s Parliament introduces a new bill mandating the automatic resignation of a PM, CM, or minister if they are jailed for 30 days without bail. This move, citing ethical and administrative concerns, could reshape Indian politics.