নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয়-রাজ্য মন্ত্রীরা যদি দুর্নীতির মামলায় ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে জেলে থাকেন, তবে তাঁদের পদ থেকে অপসারণের বিধান আনা হচ্ছে—এই সংক্রান্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল (PM–CM Removal Bills) বুধবার লোকসভায় পেশ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে প্রবল বিরোধিতার মুখে এনডিএ সরকার এই বিলগুলি সরাসরি পাশ না করে যৌথ সংসদীয় কমিটির (Joint Parliamentary Committee – JPC) কাছে পাঠিয়েছে।
সরকার যে আগেই এই রাস্তায় হাঁটার পরিকল্পনা করেছিল, তা স্পষ্ট। অমিত শাহ লোকসভায় বিলগুলি টেবিলে আনতেই বিরোধী সাংসদরা প্রবল হট্টগোল শুরু করেন। আওয়ামি মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সাফ জানিয়ে দেন, সংবিধানে এমন সংশোধনী আনা মানে ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারকে অস্থির করার ফন্দি। কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারিও কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “ভারতের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার মূলনীতি হল—দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকেই নির্দোষ। কিন্তু এই বিলের মাধ্যমে সেই নীতি ভঙ্গ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এর অপব্যবহারের আশঙ্কা প্রবল।”
কোন বিলগুলি JPC-এর হাতে গেল?
বুধবার লোকসভায় তিনটি বিল উপস্থাপিত হয়:
The Constitution (One Hundred and Thirtieth Amendment) Bill
The Government of Union Territories (Amendment) Bill, 2025
The Jammu and Kashmir Reorganisation (Amendment) Bill, 2025
এই তিনটি বিলের উদ্দেশ্য হল—কোনও মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী যদি দুর্নীতি বা অন্য কোনও গুরুতর মামলায় (যার সর্বনিম্ন সাজা পাঁচ বছর) অভিযুক্ত হয়ে ৩০ দিনের বেশি জেল খাটেন, তবে তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদ থেকে অপসারণ করা যাবে।
অমিত শাহ দাবি করেছেন, এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টা। তাঁর মতে, উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক নেতারা যদি জেলবন্দি থাকেন, তবে তাঁরা ক্ষমতার আসনে থেকে প্রশাসনকে প্রভাবিত করতে পারেন। তাই স্বচ্ছ রাজনীতির স্বার্থে এই আইন আনা জরুরি।
লোকসভায় প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে যে, একটি ৩১ সদস্যের যৌথ সংসদীয় কমিটি (লোকসভা থেকে ২১ এবং রাজ্যসভা থেকে ১০ জন সদস্য) এই বিলগুলি খতিয়ে দেখবে। সরকারের ও বিরোধী দলের দুই পক্ষের সাংসদই এই কমিটিতে থাকবেন।
কমিটি বিলগুলির আইনি, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক দিক নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ, সংস্থা বা সংশ্লিষ্ট মহলকে ডেকে মতামত নেওয়া যাবে। আগামী অধিবেশন শুরুর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য কমিটিকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় তিন মাস পরেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত সংসদের সামনে আসবে।
বর্তমানে NDA সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব—‘One Nation, One Election’—এর খসড়াও একটি যৌথ সংসদীয় কমিটির বিচারাধীন রয়েছে।
বিরোধী দলগুলির মতে, এই বিল গণতন্ত্র ও সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী। কারণ এটি “অভিযোগ” ভিত্তিক, যেখানে আদালতের রায় প্রমাণিত না হলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করা যাবে।
সম্প্রতি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন দুর্নীতির মামলায় কয়েক সপ্তাহ জেল খেটেছেন। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার সিবিআই ও ইডি-কে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। এই অভিজ্ঞতার পটভূমিতে বিরোধীরা আশঙ্কা করছে, নতুন আইন কার্যকর হলে বিরোধী নেতৃত্বকে সহজেই পদচ্যুত করা সম্ভব হবে।
তিনটি বিল আপাতত যৌথ সংসদীয় কমিটির হাতে গেলেও, বিরোধীদের মতে এ এক সাংবিধানিক সংকটের সূচনা। NDA সরকারের দাবি—এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ। তবে আসল লড়াই আগামী অধিবেশনে, যখন JPC-র রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপিত হবে।