ভারতীয় রেলের ট্রেনের (Train Toilets) কোচগুলিতে টয়লেটে জলের ঘাটতি নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (সিএজি)-এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিএজি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, টয়লেটে জলের ঘাটতি ছাড়াও জৈব টয়লেটে দুর্গন্ধ, আটকে যাওয়া এবং অকার্যকর অবস্থার মতো সমস্যা নিয়েও ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
২০১৭ সালের একটি সিএজি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ২০১৬-১৭ সালে জৈব টয়লেট নিয়ে প্রায় ২ লাখ অভিযোগ জমা পড়েছিল, যার মধ্যে ১,০২,৭৯২টি ছিল টয়লেট আটকে যাওয়ার অভিযোগ এবং ২২,৮৯৯টি ছিল জলের মগের অভাবজনিত সমস্যা। ২০২২-২৩ সালে এই সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে, বিশেষ করে জলের ঘাটতির কারণে।
সিএজি’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যাত্রীদের অভিযোগের মধ্যে টয়লেটে জলের অভাব একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা স্বাস্থ্যবিধি এবং যাত্রী সুবিধার ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
ভারতীয় রেল বিশ্বের বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে একটি, এবং প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী এই পরিষেবার উপর নির্ভর করে। তবে, ট্রেনের কোচগুলিতে মৌলিক সুবিধার অভাব, বিশেষ করে টয়লেটে জলের ঘাটতি, যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। সিএজি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থায় অপর্যাপ্ত তদারকি এবং সময়মতো মেরামতের অভাব এই সমস্যাগুলির প্রধান কারণ।
উদাহরণস্বরূপ, অনেক কোচে জৈব টয়লেটের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা এবং জল সরবরাহ ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি রয়েছে।২০১৭ সালে সিএজি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, দক্ষিণ-পশ্চিম রেলওয়ের বেঙ্গালুরু কোচিং ডিপোতে একটি জৈব টয়লেট বছরে গড়ে ৮৩ বার আটকে গিয়েছিল।
এই সমস্যা ২০২২-২৩ সালেও অব্যাহত রয়েছে, এবং জলের ঘাটতি এই সমস্যাকে আরও জটিল করেছে। রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাত্রীদের অপব্যবহার এবং টয়লেটে অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ফেলার কারণে এই সমস্যা বাড়ছে। তবে, সিএজি এই দাবিকে পুরোপুরি গ্রহণ করেনি এবং রেলওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
রেল মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের মধ্যে সমস্ত ট্রেনে জৈব টয়লেট স্থাপনের লক্ষ্য নিয়েছিল এবং ভ্যাকুয়াম জৈব টয়লেট প্রবর্তনের পরিকল্পনা করেছিল, যা গন্ধমুক্ত এবং আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু, সিএজি’র প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেয় যে, এই উদ্যোগ সম্পূর্ণরূপে সফল হয়নি। টয়লেটে জলের ঘাটতি এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এখনও যাত্রীদের জন্য একটি বড় সমস্যা।
এই অভিযোগগুলি ভারতীয় রেলের যাত্রী সুবিধার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে। সিএজি’র প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে যে, রেলওয়েকে একটি শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, যাত্রী সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত প্রচারণা এবং টয়লেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই সমস্যা সমাধানে রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ) ২০১৮ সাল থেকে ভ্যাকুয়াম জৈব টয়লেট সহ কোচ তৈরির পরিকল্পনা করেছে, যা জলের ব্যবহার কমায় এবং আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে। তবে, এই প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।
যাত্রীদের অভিযোগের মধ্যে জলের ঘাটতি ছাড়াও টয়লেটে দুর্গন্ধ, ডাস্টবিনের অভাব এবং ভাঙা সরঞ্জামের সমস্যাও উল্লেখযোগ্য। এই সমস্যাগুলি ভারতীয় রেলের ইমেজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেলওয়েকে আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
১ কোটির বেশি অযোগ্য রেশন কার্ড বাতিলের নির্দেশ নয়াদিল্লির
সিএজি’র প্রতিবেদন ভারতীয় রেলের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে। যাত্রী সুবিধার উন্নতি এবং রেল পরিষেবার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হলে রেল মন্ত্রণালয়কে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এই অভিযোগগুলির সমাধান না হলে ভারতীয় রেলের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং যাত্রী সন্তুষ্টির উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।