আন্তর্জাতিক ফোনে খুনের হুমকি, অভিযোগ করলেন চেয়ারম্যান সোমনাথ দে

বারাকপুর: ফের একবার আন্তর্জাতিক ফোনকল (International Call) ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে। একাধিক পুরপ্রতিনিধি হুমকি ফোন পাওয়ার ঘটনার পর এবার সরাসরি টার্গেট হলেন…

আন্তর্জাতিক ফোনে খুনের হুমকি, অভিযোগ করলেন চেয়ারম্যান সোমনাথ দে

বারাকপুর: ফের একবার আন্তর্জাতিক ফোনকল (International Call) ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে। একাধিক পুরপ্রতিনিধি হুমকি ফোন পাওয়ার ঘটনার পর এবার সরাসরি টার্গেট হলেন পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ দে। অভিযোগ, আন্তর্জাতিক ফোন নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন এসেছে তাঁর মোবাইলে। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও প্রকাশ্যে হুমকি পোস্ট করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে। স্বাভাবিকভাবেই ঘটনার পর এলাকায় রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

সূত্রের খবর, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সম্রাট চক্রবর্তীকে এর আগে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটে চেয়ারম্যান সোমনাথ দে’র শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের নতুন করে হুমকি ফোন আসে। এবার নিশানায় পড়েন পানিহাটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাপস দে ও ভাইস চেয়ারম্যান সুভাষ চক্রবর্তী। তাঁদের কাছেও এসেছিল আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে ফোন। আশ্চর্যের বিষয়, সবকটিই ছিল একই ধরনের আন্তর্জাতিক ফোন নম্বর (+১৭ দিয়ে শুরু হওয়া)।

   

চেয়ারম্যান সোমনাথ দে জানিয়েছেন, গত ১৬ই আগস্ট প্রথমবার ফোন আসে। তিনি তখন একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় কল ধরতে পারেননি। পরে নম্বর চেক করে দেখেন আন্তর্জাতিক নম্বর। এর একদিন পর অর্থাৎ ১৭ই আগস্ট ফের ফোন আসে। সোমনাথবাবুর দাবি, “আগেও এই একই নম্বর থেকে সম্রাট চক্রবর্তীকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। যদিও তখন তিনি রিসিভ করেননি। এবার আমাকে সরাসরি ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে।”

এতেই শেষ নয়, একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও একের পর এক কটূ মন্তব্য ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সোমনাথ দে জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি এবং সম্রাট চক্রবর্তীর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে সেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে। ফলে হুমকির বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “আমি এবং সম্রাট চক্রবর্তী দু’জনকেই নিশানা করা হচ্ছে। বিষয়টি আর সাধারণ ফোনকলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, এবার তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।”

ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে ইতিমধ্যেই পুলিশ কমিশনারকে পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে। খড়দহ ও ঘোলা থানায় ই-মেলের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করেছেন চেয়ারম্যান। বুধবার সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এফআইআর করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক ফোনকলের সোর্স খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ফেসবুক প্রোফাইলটির কার্যকলাপ নজরে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সংস্থার সাহায্য নেওয়া হতে পারে।

Advertisements

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, পুরসভার একাধিক জনপ্রতিনিধি যদি একের পর এক হুমকি ফোন পান, তবে তাঁদের নিরাপত্তা কতটা সুরক্ষিত? বিরোধী দলের একাংশের দাবি, “এটা সাধারণ ঘটনা নয়। এর পিছনে একটি বড় চক্র থাকতে পারে।” তবে শাসকদলের নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যেভাবেই হোক এর তদন্ত হওয়া দরকার।

পুলিশ প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, দোষীদের কোনওভাবেই ছাড়া হবে না। আন্তর্জাতিক নম্বরের হদিশ মিললেই এ বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়া করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সব মিলিয়ে, একের পর এক আন্তর্জাতিক হুমকি ফোনে রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষ—সবাই আতঙ্কে। পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ দে এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের নিশানা করে কারা এই হুমকি দিচ্ছে, তা নিয়েই এখন তদন্তে জোর দিচ্ছে পুলিশ।