ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অগ্নি-৫ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষণ (Indian Army)। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে যে, ওড়িশার এপিজে আব্দুল কালাম দ্বীপ (পূর্বে হুইলার দ্বীপ) থেকে অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়েছে, এবং এটি সমস্ত কার্যকরী ও প্রযুক্তিগত পরামিতি সফলভাবে যাচাই করেছে।
এই পরীক্ষা ভারতের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং দেশের প্রতিরক্ষা কৌশলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।অগ্নি-৫ হল ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) দ্বারা নির্মিত একটি উন্নত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার আঘাত ক্ষমতা ৫,৫০০ থেকে ৮,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ১.৫ টন পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম এবং এটি মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবল রি-এন্ট্রি ভেহিকল (এমআইআরভি) প্রযুক্তিতে সজ্জিত। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অগ্নি-৫ একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে একযোগে আঘাত হানতে পারে, যা এটিকে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলেছে।
এই পরীক্ষণটি অগ্নি-৫-এর নির্ভরযোগ্যতা এবং নির্ভুলতা প্রমাণ করেছে, যা ভারতের কৌশলগত প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ সমস্ত প্রত্যাশিত প্রযুক্তিগত ও কার্যকরী পরামিতি পূরণ করেছে। এই পরীক্ষা ভারতের স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং ডিআরডিও’র বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রমের প্রমাণ।”
এই পরীক্ষণটি রাত্রিকালীন পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে, যা এই ক্ষেপণাস্ত্রের যেকোনো পরিবেশে কার্যকারিতা প্রমাণ করে।অগ্নি-৫-এর এই সফল পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারতের ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ পারমাণবিক নীতির অধীনে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
এর বিশাল আঘাত ক্ষমতার কারণে এটি এশিয়া এবং তার বাইরেও ভারতের কৌশলগত নাগাল বাড়িয়েছে। বিশেষ করে, এই ক্ষেপণাস্ত্র চিন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে, যারা ভারতের সঙ্গে জটিল ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কে জড়িত।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সাফল্যের জন্য ডিআরডিও’র বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “অগ্নি-৫-এর সফল পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ। এটি আমাদের আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমি ডিআরডিও এবং আমাদের বিজ্ঞানীদের এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানাই।” প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও এই পরীক্ষার জন্য ডিআরডিও’র প্রশংসা করে বলেছেন, “এই সাফল্য ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের সক্ষমতা প্রদর্শন করে।”
অগ্নি-৫-এর এই পরীক্ষা ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র প্রোগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি তিন-পর্যায়ের কঠিন জ্বালানি চালিত ব্যবস্থা ব্যবহার করে, যা এটিকে উচ্চ গতিসম্পন্ন এবং নির্ভুল করে তোলে। এর ক্যানিস্টার-ভিত্তিক উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা এটিকে দ্রুত এবং নমনীয়ভাবে মোতায়েন করার সুবিধা দেয়।
এই পরীক্ষা ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের (এসএফসি) জন্যও একটি বড় সাফল্য, কারণ এটি তাদের কৌশলগত অস্ত্রশস্ত্রের ভাণ্ডারকে আরও শক্তিশালী করেছে।এই পরীক্ষার প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশল এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে।
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে উত্তেজনা এবং বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অগ্নি-৫-এর সক্ষমতা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে।এই সাফল্য ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
সাইবার জালিয়াতির নিশানায় রাজ্যপালের নাম, কড়া গাইডলাইন প্রকাশ
ডিআরডিও’র বিজ্ঞানীরা দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছেন, যা ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বমানের সক্ষমতা প্রদর্শন করে। এই পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিশ্ব মঞ্চে ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে আরও মজবুত করেছে।