জিএসটি সংস্কারে সাধারণ মানুষের স্বস্তি, আশ্বাস দিলেন অর্থমন্ত্রী সীতারামন

দেশের পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) ব্যবস্থায় আগামী দিনে আসছে বড় সংস্কার (GST Reforms)। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তিনটি গ্রুপ অব মিনিস্টারস (GoMs)-এর বৈঠকে জানিয়েছেন, কেন্দ্র…

FM Sitharaman Pitches Next-Gen GST Reforms To Aid Common Man, MSMEs

দেশের পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) ব্যবস্থায় আগামী দিনে আসছে বড় সংস্কার (GST Reforms)। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তিনটি গ্রুপ অব মিনিস্টারস (GoMs)-এর বৈঠকে জানিয়েছেন, কেন্দ্র সরকার পরবর্তী প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য— ভারতের আত্মনির্ভর ভিশনকে আরও মজবুত করা এবং সাধারণ মানুষ, কৃষক, মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (MSMEs) ওপর করের চাপ কমানো।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্র সরকার এই সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে বিস্তৃত ঐকমত্য গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কারের মূল স্তম্ভ হবে কাঠামোগত পরিবর্তন, হারের যৌক্তিকীকরণ এবং সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি আনা।”
অর্থমন্ত্রী সীতারামন জানান, সংস্কার প্রক্রিয়া তিনটি মূল স্তম্ভকে সামনে রেখে এগোবে—

   

1. কাঠামোগত পরিবর্তন (Structural Changes): জিএসটির বিদ্যমান জটিলতা হ্রাস করে ব্যবসার জন্য আরও সহজ কাঠামো তৈরি করা।
2. হারের যৌক্তিকীকরণ (Rate Rationalisation): একাধিক স্ল্যাবের বদলে সরলীকৃত করহার প্রবর্তন, যাতে ভোক্তা ও ব্যবসা উভয় পক্ষই উপকৃত হয়।
3. Ease of Living: সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করার লক্ষ্যে কর নীতি আরও স্বচ্ছ ও কার্যকরী করা।
বর্তমানে জিএসটির হার চারটি স্তরে বিভক্ত— ৫%, ১২%, ১৮% ও ২৮%। এর বাইরে কিছু বিশেষ পণ্য ও সেবা শূন্য হারে করের আওতায় রয়েছে। প্রস্তাবিত সংস্কারের ফলে এই চার স্তরের কাঠামোকে সরলীকৃত করে আনা হবে দুই স্তরে— ৫% ও ১৮%।
৫% স্ল্যাব: প্রয়োজনীয় সামগ্রী, খাদ্যপণ্য ও দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য দ্রব্য।
১৮% স্ল্যাব: অধিকাংশ পণ্য ও পরিষেবা, যা এখন ১২% ও ১৮% হারের মধ্যে রয়েছে।

এছাড়াও, “সিন গুডস” অর্থাৎ বিলাসবহুল বা ক্ষতিকর দ্রব্য যেমন তামাকজাত পণ্য, মদ ইত্যাদির জন্য বিশেষভাবে ৪০% হারের একটি উচ্চ স্ল্যাব রাখার প্রস্তাব রয়েছে। সংখ্যায় এগুলি হবে মাত্র ৫–৭টি পণ্য।

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কেন্দ্র আশা করছে, ব্যবসার জন্য কর গণনা সহজ হবে, কর ফাঁকি কমবে এবং রাজস্ব সংগ্রহ আরও কার্যকরী হবে।
অর্থমন্ত্রী বৈঠকে পরিষ্কার করে দেন যে, এই সংস্কার একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। বরং সহযোগী ফেডারালিজমের ভিত্তিতে রাজ্যগুলির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কেন্দ্র আশা করছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যগুলির সঙ্গে ঐকমত্য তৈরি হবে।
অর্থ মন্ত্রক এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ পোস্ট করে জানিয়েছে, “আত্মনির্ভর ভারতের পথে এগোতে জিএসটি সংস্কার অপরিহার্য। এই প্রক্রিয়ায় রাজ্যগুলির মতামত সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে।”

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৭ সালে জিএসটি চালুর পর থেকে ব্যবসায়ীরা বারবার হারের জটিলতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। চার স্তরের কাঠামো, সঙ্গে বিভিন্ন সেস ও অতিরিক্ত শর্ত থাকায় ভ্যাট ব্যবস্থার মতো একাধিক সমস্যাই থেকে গিয়েছে।
এই প্রস্তাব কার্যকর হলে—

জটিলতা কমবে: একাধিক স্ল্যাবের পরিবর্তে দুই স্ল্যাব থাকায় ভ্যাট/এক্সাইজের মতো দ্বৈততার অভিযোগ থাকবে না।
ইনভার্টেড ডিউটি স্ট্রাকচারের সমস্যা মিটবে: যেখানে কাঁচামালে কর বেশি, আর চূড়ান্ত পণ্যে কর কম— সে ধরনের সমস্যার সমাধান হবে।
ব্যবসার স্বচ্ছতা বাড়বে: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও MSME সেক্টর সবচেয়ে বেশি স্বস্তি পাবে।
রাজস্ব স্থিতিশীল হবে: সরকারও সুনির্দিষ্ট ও টেকসই রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে।
অর্থমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, তিনটি গ্রুপ অব মিনিস্টারস— রেট যৌক্তিকীকরণ, বীমা কর এবং ক্ষতিপূরণ সেস নিয়ে গঠিত— এই প্রস্তাব নিয়ে দুই দিনের গভীর আলোচনা করছে। এই আলোচনায় রাজ্যগুলির মতামত চূড়ান্তভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে।
অর্থমন্ত্রী প্রায় ২০ মিনিটের ভাষণে সংস্কার রূপরেখা তুলে ধরেন এবং প্রস্তাবিত পরিবর্তনের যুক্তি ব্যাখ্যা করেন।

যদি এই সংস্কার কার্যকর হয়, তবে এটি হবে ২০১৭ সালের পর থেকে জিএসটির সবচেয়ে বড় রূপান্তর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে—
ভোক্তারা স্বস্তি পাবেন কারণ কর কাঠামো হবে সরল ও বোধগম্য।
ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে, যা বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করবে।
রাজ্য ও কেন্দ্রের রাজস্ব স্থিতিশীল হবে, কারণ সিন গুডসে উচ্চ হারের কর বজায় থাকবে।
আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যে কর কাঠামো হবে আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ।

জিএসটি সংস্কার নিয়ে কেন্দ্র সরকারের এই প্রস্তাব নিঃসন্দেহে দেশের কর কাঠামোতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে। তবে এর বাস্তবায়ন অনেকটাই নির্ভর করবে রাজ্যগুলির সম্মতির ওপর। সহযোগী ফেডারালিজমের ভিত্তিতে যদি ঐকমত্য গড়ে ওঠে, তবে ভারতীয় কর ব্যবস্থার ইতিহাসে এটি হবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন, যা সরকার, ব্যবসা ও সাধারণ মানুষ— সকলের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।