২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনকে ঝালিয়ে নিতে জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) একের পর এক সাংগঠনিক জেলায় বৈঠক করে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন—আগামী নির্বাচনে গুরুত্ব পাবে কেবলমাত্র সেই কর্মীরাই, যাঁদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যাঁরা দলের কাছে ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তির’ প্রতীক। বুধবার রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে দাঁড়িয়েই তিনি জানিয়ে দিলেন, “দলের পুরনো, বিশ্বাসযোগ্য এবং সত্ নেতাকর্মীদের সামনে এগিয়ে দিতে হবে। আগামী নির্বাচনের রণকৌশল হবে তাঁদের হাত ধরেই।”
এর আগে তমলুক ও বারাসত সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন অভিষেক। সেখানেও তিনি দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটানোর ওপর বিশেষ জোর দেন। দলের ভেতরকার দ্বন্দ্ব নিয়ে বহুবার বিরোধীরা আক্রমণ শানিয়েছে। ফলে এই পর্যায়ে এসে অভিষেকের বার্তা স্পষ্ট—সব ভেদাভেদ ভুলে একজোট হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা গত কয়েকটি নির্বাচনে তৃণমূলের জন্য বিশেষ সুখকর হয়নি। বিজেপি সেখানে তুলনামূলকভাবে ভালো ফল করেছে। তাই বৈঠকে অভিষেক স্পষ্ট নির্দেশ দেন, ২০২৬-এর আগে সংগঠনকে মজবুত করতেই হবে। বিশেষ করে বুথস্তরে প্রচার বাড়ানোর ওপর তিনি জোর দেন। নেতাদের বলেন, “ভোটের সময় নয়, এখন থেকেই মানুষের দরজায় দরজায় পৌঁছতে হবে।”
রানাঘাট সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন বা SIR (Special Intensive Revision) নিয়ে সক্রিয়ভাবে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথাও বলেন অভিষেক। তাঁর মতে, ভোটার তালিকা নিয়ে গাফিলতি করলে ফল ভুগতে হবে সংগঠনকেই।
তৃণমূলের ভেতরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখন কার্যত নির্বাচনী ম্যানেজারের ভূমিকায়। ২০২১ সালের পর থেকে তিনি যেভাবে জেলা ধরে ধরে সংগঠনকে নতুন করে সাজিয়েছেন, তাতে নেতৃত্বের একটি বার্তা স্পষ্ট—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তির পাশাপাশি সংগঠনের ভিতকে মজবুত করে এগোতেই হবে।
রানাঘাটের বৈঠকে তিনি জানিয়ে দেন, “দলের মধ্যে যারা ত্যাগ স্বীকার করে আজও সততার সঙ্গে কাজ করছেন, তাঁদেরই সামনে আনতে হবে।” তাঁর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা, গত কয়েক বছরে দলের একাংশে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। অনেক পুরনো নেতা-নেত্রী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাই অভিষেক এখন পুরনো কর্মীদের ধরে রাখার পাশাপাশি তাঁদের ‘যোগ্য মর্যাদা’ দেওয়ার দিকেই নজর দিচ্ছেন।
বৈঠকে অভিষেক ইঙ্গিত দেন, বিজেপি যেভাবে সীমান্তবর্তী এলাকায় সংগঠন বাড়াচ্ছে, তৃণমূলকে আরও সক্রিয় হতে হবে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা প্রকল্পের অপূর্ণতা এবং রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি—এই দুই দিককে সামনে রেখেই প্রচার চালাতে হবে। অভিষেক বারবার দলের কর্মীদের বলেন, “মানুষের কাছে যান, সরকারের কাজের খতিয়ান দিন, প্রতিপক্ষকে মানুষই জবাব দেবে।”
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সাংগঠনিক বৈঠকগুলি তৃণমূলের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর মূল বার্তা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও দলের প্রতি দীর্ঘদিনের নিষ্ঠাই হবে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের মূলমন্ত্র। রানাঘাটের মতো কঠিন জেলায় ঘুরে দাঁড়াতে তিনি নিজেই মাঠে নেমে রণকৌশল সাজাচ্ছেন। এখন দেখার, অভিষেকের এই পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হয় এবং তৃণমূল কংগ্রেস আবারও ভোটের লড়াইয়ে নিজের অবস্থান মজবুত করতে পারে কি না।