মন্ত্রী অপসারণ বিল নিয়ে কেন্দ্রের পাশে পিকে

গুরুতর অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার (Prashant Kishor) প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের পদ থেকে অপসারণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত তিনটি বিল নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনা চলছে।…

Prashant Kishor supporting modi

গুরুতর অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার (Prashant Kishor) প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের পদ থেকে অপসারণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত তিনটি বিল নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনা চলছে। এই বিলগুলি হল সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিল, ২০২৫, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকার (সংশোধনী) বিল, ২০২৫ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল, ২০২৫।

এই বিলগুলি সংসদে উত্থাপন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই প্রেক্ষাপটে জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) এই বিলের সমর্থনে সরব হয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এই বিলটি এনেছে কারণ, যখন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল, তখন এর রচয়িতারা এবং দেশের প্রতিষ্ঠাতারা কল্পনাও করেননি যে ক্ষমতাসীনরা এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অপরাধী হয়ে উঠবেন যে তাদের জেলে যেতে হবে।

   

এমনকি জেলে যাওয়ার পরেও তারা তাদের পদ ছাড়বেন না। আমি মনে করি এই বিলটি ভালো, কারণ কোনো নেতা যদি অভিযুক্ত হয়ে জেলে যান, তবে তিনি জেল থেকে সরকার চালাতে পারেন না।”প্রশান্ত কিশোরের এই বক্তব্য এই বিলের প্রতি তাঁর সমর্থন এবং রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি তাঁর অঙ্গীকার প্রকাশ করে।

এই বিলগুলির মূল উদ্দেশ্য হল, যদি কোনো প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী পাঁচ বছর বা তার বেশি সাজার অপরাধে গ্রেফতার হন এবং টানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিনে তাদের পদ থেকে অপসারিত করা হবে। এই বিধান সংবিধানের ৭৫, ১৬৪ এবং ২৩৯এএ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনবে। বিলে বলা হয়েছে, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি হেফাজত থেকে মুক্তি পেলে পুনরায় নিয়োগের জন্য যোগ্য হতে পারবেন।

প্রশান্ত কিশোরের মতে, এই বিল রাজনীতিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ। তিনি বলেছেন, “সংবিধান প্রণেতারা এমন পরিস্থিতির কথা ভাবেননি যে ক্ষমতাসীন নেতারা এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত হবেন যে তাদের জেলে যেতে হবে। এই বিল জনগণের আস্থা এবং সাংবিধানিক নৈতিকতা রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি আরও জানিয়েছেন যে, জেল থেকে সরকার পরিচালনা করা গণতন্ত্রের মূলনীতির বিরুদ্ধে।এই বিলগুলি সংসদে উত্থাপনের পর বিরোধী দলগুলি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস এবং এআইএমআইএম-এর মতো দলগুলি এই বিলকে ‘সংবিধান বিরোধী’ এবং ‘গণতন্ত্র বিরোধী’ বলে অভিহিত করেছে।

তারা অভিযোগ করেছে যে কেন্দ্রীয় সরকার এই বিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি, যেমন ইডি এবং সিবিআই, ব্যবহার করে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করে তাদের সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “ইডি-র দোষী সাব্যস্তির হার মাত্র ০.৫ শতাংশ। এই বিল বিরোধীদের দমন করার একটি অস্ত্র।”

Advertisements

তবে, প্রশান্ত কিশোর এই বিলকে রাজনীতির অপরাধীকরণ রোধে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করেন। তিনি বলেছেন, “যদি একজন নেতা গুরুতর অপরাধের অভিযোগে জেলে থাকেন, তবে তাঁর পদে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।

এই বিল সেই নৈতিক মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করবে।” তিনি উদাহরণ হিসেবে দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তামিলনাড়ুর মন্ত্রী ভি. সেন্থিল বালাজির ঘটনা উল্লেখ করেছেন, যারা গ্রেফতার হওয়ার পরেও পদে থেকে সরকার পরিচালনা করেছেন।

সংসদে এই বিলগুলি একটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে কেন্দ্র এবং বিরোধী দলের সাংসদরা তাদের মতামত পেশ করতে পারবেন। অমিত শাহ বলেছেন, “আমরা এমন ব্যক্তিদের ক্ষমতায় থাকতে দেব না যারা গুরুতর অপরাধের অভিযোগে জেলে আছেন। এই বিল সাংবিধানিক নৈতিকতা এবং জনগণের আস্থা রক্ষার জন্য।”

বিরোধী দলগুলি এই বিলকে ‘পুলিশ রাষ্ট্র’ তৈরির প্রচেষ্টা বলে সমালোচনা করলেও, প্রশান্ত কিশোরের সমর্থন এই বিলের পক্ষে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। তিনি বলেছেন, “এই বিল জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছ শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।” তবে, তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে, এই বিলের অপব্যবহার রোধে স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়া এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই বিল নিয়ে সংসদে তীব্র বিতর্ক এবং বিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে। বিরোধী দলগুলি এটিকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর উপর আঘাত হিসেবে দেখছে, যেখানে প্রশান্ত কিশোরের মতো রাজনৈতিক কৌশলবিদরা এটিকে রাজনীতিতে সংস্কারের একটি পদক্ষেপ বলে মনে করছেন। এই বিলের ভবিষ্যৎ এবং এর বাস্তবায়ন ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।