বুধবার ভারতের শেয়ারবাজারে (Indian Share Market) দিনভর অস্থির লেনদেনের সাক্ষী হলেন বিনিয়োগকারীরা। দিনের শুরুটা লাল নিশানায় হলেও শেষ পর্যন্ত রঙ বদলে সবুজে ফিরল সূচক। টানা পাঁচ ট্রেডিং সেশনে লাভ ধরে রাখল দুই প্রধান সূচক— বিএসই সেনসেক্স ও এনএসই নিফটি।
প্রথম ঘণ্টার লেনদেনে বাজারে চাপ স্পষ্ট ছিল। সকালে সেনসেক্স নেমে গিয়েছিল ১১২ পয়েন্ট বা ০.১৪ শতাংশ নিচে, ৮১,৫৩১ স্তরে। একই সময়ে নিফটি হারায় ৪১ পয়েন্ট বা ০.১৬ শতাংশ, নেমে যায় ২৪,৯৩৯–এ। তবে বিকেলের দিকে আইটি স্টকগুলির জোরে বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত সেনসেক্স ২০০–এরও বেশি পয়েন্ট যোগ করে স্থির হয় ৮১,৮৫০–এর ওপরে, আর নিফটি ৬৮ পয়েন্ট উঠে গিয়ে দিন শেষ করে ২৫,০৫০–এর ঠিক নিচে।
বিএসইর ৩০ শেয়ারের সেনসেক্সে শীর্ষ গেইনারদের মধ্যে ছিল ইনফোসিস, টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস), হিন্দুস্তান ইউনিলিভার (এইচইউএল), এনটিপিসি ও টেক মাহিন্দ্রা। প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলিই দিনভর বাজারকে টেনে তোলে। অন্যদিকে লুজারদের তালিকায় ছিল বিএইএল, বাজাজ ফাইন্যান্স, টাটা মোটরস, ট্রেন্ট এবং বাজাজ ফিনসার্ভ।
এনএসইর বৃহত্তর বাজারেও ইতিবাচক সাড়া দেখা যায়। নিফটি মিডক্যাপ সিলেক্ট সূচক বেড়ে যায় ০.৭১ শতাংশ। তবে সব সেক্টরে সমান জোর ছিল না।
- আইটি সূচক: দিনটির প্রধান আকর্ষণ ছিল তথ্যপ্রযুক্তি সূচক। বেড়ে গিয়েছে প্রায় ২.৬৯ শতাংশ, যা বাজারের র্যালিতে বড় অবদান রাখে।
- মিডিয়া সূচক: অন্যদিকে মিডিয়া সূচক পড়ে যায় ১.৯৮ শতাংশ।
- এফএমসিজি ও পাওয়ার: এফএমসিজি ও পাওয়ার স্টকও কিছুটা সহায়তা দেয় বাজারকে।
জিওজিত ইনভেস্টমেন্টস–এর গবেষণা প্রধান বিনোদ নাইয়ার জানান, মার্কিন প্রশাসনের তরফে আসা বার্তা এখনো ইতিবাচক নয়। আগামী ২৭ আগস্ট থেকে ভারতের উপর ২৫ শতাংশ সেকেন্ডারি ট্যারিফ কার্যকর হবে কি না, সেই অনিশ্চয়তা বাজারকে চাপে রাখছে। তাঁর কথায়, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি যুক্তি ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে নয়, ব্যক্তিগত খেয়ালের ওপর নির্ভর করছে। তাই টানা ঊর্ধ্বমুখী বাজারের সম্ভাবনা আপাতত কম।”
বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (FII) আবারও বিক্রির পথে হাঁটলেন। মঙ্গলবার তাঁরা শেয়ার বিক্রি করেছেন প্রায় ৬৩৪ কোটি টাকার। যদিও দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (DII) বাজারে বড় সহায়ক ভূমিকা নেন। এদিন তাঁরা প্রায় ২,২৬১ কোটি টাকার শেয়ার নেট কেনাকাটা করেছেন। এফআইআই–দের বিক্রির চাপ সামাল দিতেই দেশীয় বিনিয়োগকারীদের এই সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি হয়ে দাঁড়ায়।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বুধবারের লেনদেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রির ধারা বাজারে চাপ তৈরি করছে, কিন্তু দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও রিটেল বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা বাজারকে সবুজে ধরে রাখছে। বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শক্তিশালী ফলাফল বাজারকে সমর্থন দিচ্ছে।
তবে সামনের দিনগুলোতে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক, গ্লোবাল কমোডিটি প্রাইস, এবং ডলার–রুপির অস্থির গতি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার–সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও বিনিয়োগকারীদের নজরে থাকবে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বল্পমেয়াদে বাজারে অস্থিরতা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে আইটি ও পাওয়ার খাত স্থিতিশীল বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে উচ্চ মূল্যায়নের কারণে নতুন বিনিয়োগে সাবধানতার প্রয়োজন। যারা আগে থেকেই বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের জন্য পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যকরণ জরুরি।
সার্বিকভাবে, বুধবারের শেয়ারবাজারের ছবিটা ছিল ভোলাটাইল হলেও শেষটা ছিল আশাব্যঞ্জক। সেনসেক্স ও নিফটির টানা পাঁচ দিনের লাভ বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা ফিরিয়ে আনছে। তবে মার্কিন শুল্কনীতি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আচরণ আগামী দিনে সূচকের দিক নির্ধারণ করবে। দেশীয় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণই আপাতত বাজারের বড় শক্তি।