দিল্লি: সংসদে ফের উত্তাল পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্র ও রাজ্যের মন্ত্রীদের অপসারণ সংক্রান্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল যৌথ সংসদীয় কমিটির (JPC) কাছে পাঠাল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। মঙ্গলবার লোকসভায় এই বিলগুলি উপস্থাপন করতে গেলে প্রবল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। বিরোধী দলগুলি একবাক্যে দাবি করে, এই বিলগুলি সংবিধানবিরোধী এবং গণতন্ত্রের মূল কাঠামোকে দুর্বল করার চেষ্টা।
প্রসঙ্গত, বিলগুলির মধ্যে অন্যতম সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিল, গভর্নমেন্ট অফ ইউনিয়ন টেরিটরিজ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫, এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল, ২০২৫। এই বিলগুলিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় বা রাজ্যের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যদি পাঁচ বছরের বেশি কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধে অভিযোগ আনা হয় এবং তাঁরা ৩০ দিনের বেশি জেলে থাকেন, তবে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যাবে।
এখানেই বিরোধীরা আপত্তি তুলেছে। তাঁদের মতে, কেবল অভিযোগের ভিত্তিতেই পদ থেকে অপসারণের ব্যবস্থা সংবিধানের ‘ন্যায়সঙ্গত বিচারের অধিকার’ এবং ‘দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ’ থাকার নীতি ভঙ্গ করছে। কংগ্রেসের সাংসদরা বলেন, “এটি সরাসরি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার আইনি হাতিয়ার। অভিযোগ মানেই অপরাধ নয়। আদালতের চূড়ান্ত রায়ের আগে কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করার প্রস্তাব গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিরোধী।”
বিলটি উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, “দেশের সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিদের ওপর যদি গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে তাঁদের পদে থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। এই বিল জনসাধারণের আস্থা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।” তবে বিরোধীরা তাঁর কথা শুনতেই দেননি। প্রবল স্লোগানবাজির মধ্যে স্পিকার ঘোষণা করেন, বিলগুলি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই পদক্ষেপ সরকারপক্ষের জন্য একধরনের “কৌশলগত ব্যাকফুট”, তবে আসলে এটি স্ক্রিপ্টের বাইরেই নয়। কারণ, বিরোধীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া আগেই অনুমান করেছিলেন সরকার। তাই সরাসরি লোকসভায় পাস করানোর চেষ্টা না করে JPC-তে পাঠিয়ে দেওয়া হল। বিশ্লেষকরা এটাও বলছেন, বিলগুলি যদি আইন হিসেবে কার্যকর হয়, তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা প্রশাসনিকভাবে প্রবল চাপে পড়তে পারেন।
তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, সিপিআইএম সহ একাধিক আঞ্চলিক দলও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, “সংবিধানের মূল নীতি হলো, অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হলে তবেই দণ্ড। কিন্তু এখানে কেবলমাত্র এফআইআর বা চার্জশিটের ভিত্তিতে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাব আনা হয়েছে। এটি কার্যত ভোটারদের দেওয়া ম্যান্ডেটের প্রতি অশ্রদ্ধা।”
অন্যদিকে, বিজেপি সাংসদরা এই প্রস্তাবকে সমর্থন করে বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত বা অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের শীর্ষ পদে থাকা গণতন্ত্রের জন্য লজ্জার। এই আইন হলে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি নতুন করে আস্থা রাখতে পারবেন।
এখন দেখার বিষয়, যৌথ সংসদীয় কমিটির আলোচনার পরে এই বিলগুলির ভাগ্যে কী দাঁড়ায়। তবে আপাতত সংসদ চত্বরে এই ইস্যুকে ঘিরে রাজনৈতিক সংঘাত তুঙ্গে।