লোকসভায় আজ উত্তপ্ত (Kalyan) পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গুরুতর অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের অপসারণ সংক্রান্ত তিনটি বিল উত্থাপন করেন। এই বিলগুলি হল সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিল, ২০২৫, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকার (সংশোধনী) বিল, ২০২৫ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল, ২০২৫।
বিলগুলি উত্থাপনের পরপরই বিরোধী দলের সাংসদরা প্রতিবাদে বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেন, যা সংসদে তীব্র হট্টগোলের সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “কিছু সাংসদ বিলের কাগজ ছিঁড়েছেন। আমি নিজে ছিঁড়িনি, তবে সেটা একপাশে রাখুন। এই বিল সংবিধান বিরোধী।
এমন বিলের সঙ্গে আর কী করা যায়, যদি না ছিঁড়ে ফেলা হয়? যা করা হয়েছে, তা ঠিকই হয়েছে। আমি না করলেও, এটা ন্যায্য ছিল, কারণ এই বিল সংবিধান বিরোধী এবং গণতন্ত্র বিরোধী। সংবিধানের ৭৫ নম্বর অনুচ্ছেদ তার মৌলিক কাঠামোর অংশ। তারা এটিকে কীভাবে সংশোধন করতে পারে? এটা সংশোধন করা যায় না। তারা কি মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেবে? ইডি-র সব মামলা ভুয়ো।
ইডি-র দোষী সাব্যস্তির হার মাত্র ০.৫ শতাংশ।”এই বিলগুলির লক্ষ্য হল, যদি কোনো প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী পাঁচ বছর বা তার বেশি সাজার অপরাধে গ্রেপ্তার হন এবং টানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিনে তাদের পদ থেকে অপসারিত করা হবে। এই বিধান সংবিধানের ৭৫, ১৬৪ এবং ২৩৯এএ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনবে।
তবে, তৃণমূল কংগ্রেস এই বিলকে গণতন্ত্র এবং ফেডারেল কাঠামোর উপর আঘাত হিসেবে দেখছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার এই বিলের মাধ্যমে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি, যেমন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চালানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
লোকসভায় বিলের কপি ছেঁড়ার ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তৃণমূল সহ অন্যান্য বিরোধী দলের সাংসদরা এই বিলকে ‘সংবিধান বিরোধী’ এবং ‘জনগণের ম্যান্ডেটের বিরুদ্ধে’ বলে সমালোচনা করেছেন। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, “ইডি-র মামলাগুলির দোষী সাব্যস্তির হার এত কম হওয়া সত্ত্বেও, এই সংস্থাকে বিরোধী নেতাদের হয়রানি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই বিল কেন্দ্রের হাতে আরও ক্ষমতা তুলে দেবে, যা তারা বিরোধীদের দমন করতে ব্যবহার করবে।”এই বিলের প্রেক্ষাপটে দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তামিলনাড়ুর মন্ত্রী ভি. সেন্থিল বালাজির মামলাগুলি উল্লেখযোগ্য। কেজরিওয়াল আবগারি নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল থেকে সরকার পরিচালনা করেছিলেন, এবং সেন্থিল বালাজি মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেফতার থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রী পদে রয়েছেন।
তৃণমূলের আশঙ্কা, এই বিল পাস হলে কেন্দ্র বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতার করে তাদের পদ থেকে সরিয়ে রাজ্য সরকারগুলিকে অস্থিতিশীল করতে পারে।কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অমিত শাহ দাবি করেছেন যে এই বিল সাংবিধানিক নৈতিকতা এবং জনগণের আস্থা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।
তিনি বলেছেন, “গুরুতর অপরাধের অভিযোগে হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া জনগণের আস্থার উপর আঘাত।” তবে, বিরোধীরা এই যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে এটি কেন্দ্রের রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ।লোকসভায় বিলের কপি ছেঁড়ার ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের সাংসদরা কোনো দ্বিধা প্রকাশ করেননি।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এই ধরনের বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর উপর আঘাত করা যায় না।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে তৃণমূল এই বিলের বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে এবং বাইরে লড়াই চালিয়ে যাবে।বিশ্লেষকদের মতে, এই বিল ভারতের ফেডারেল কাঠামো এবং কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
পুরোনো স্মৃতি নয়, যুবভারতীতে এবার নতুন ইতিহাস গড়তে চান এই ফুটবলার
তৃণমূলের তীব্র প্রতিবাদ এবং সংসদে হট্টগোল এই বিলের রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা প্রকাশ করে। সংসদের আসন্ন অধিবেশনে এই বিল নিয়ে আরও তীব্র বিতর্ক এবং বিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে। তৃণমূল এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি এই বিলকে বাধা দেওয়ার জন্য একত্রিত হয়েছে, এবং এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দেয়।