অবৈধ বাংলাদেশি (Bangladesh) অনুপ্রবেশ নিয়ে সোচ্চার বাংলা। এর মধ্যেই বাংলাদেশে ভারতীয় অনুপ্রবেশ নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিল ইউনুস সরকার। বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তামিলনাড়ু প্রদেশের এক পুলিশ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নাম পি জন সেলভারাজ।
৫২ বছর বয়সী সেলভারাজ তামিলনাড়ুতে স্পেশাল সাব-ইন্সপেক্টর (এসএসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মাটিলা সীমান্ত এলাকায়। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় মহেশপুর-৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন তাকে আটক করে। পরে তাকে মহেশপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পি জন সেলভারাজ ২২ মার্চ মাটিলা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। বিজিবির টহল দল তাকে সন্দেহজনক অবস্থায় দেখতে পায় এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তার পরিচয় নিশ্চিত হয়।
তিনি তামিলনাড়ুর বাসিন্দা এবং ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য বলে জানা যায়। গ্রেফতারের পর তাকে মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়, এবং পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের ক্রমবর্ধমান ঘটনার প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য। বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিগুলো অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবিকে সহায়তা করছে।
পি জন সেলভারাজের গ্রেফতারির ঘটনা নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় পুলিশ কর্মী হিসেবে তার পরিচয় এই ঘটনাকে আরও জটিল করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় কোনো বৈধ কাগজপত্র বহন করেননি, যা তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অন্যতম কারণ।
বিজিবির কর্মকর্তা লে. কর্নেল কামরুল আহসান জানিয়েছেন, “আটক ব্যক্তির কাছে কোনো পাসপোর্ট বা বৈধ কাগজপত্র ছিল না। তাই তাকে পাসপোর্ট আইন এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের সমস্যাকে সামনে এনেছে। বিশেষ করে, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রায়ই অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে এই সীমান্তে অনুপ্রবেশের ঘটনা আগের বছরের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ঠেকাতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং বিজিবি যৌথভাবে কাজ করছে।
এই ঘটনার পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালান রোধে দুই দেশই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি, বিএসএফ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের পুশ-ইন করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
পি জন সেলভারাজের গ্রেফতারের ঘটনা স্থানীয় জনগণের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, একজন পুলিশ কর্মীর এমন কাণ্ড সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি কেন এবং কী উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। তবে, এ বিষয়ে তদন্ত চলমান, এবং বিজিবি ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ আরও তথ্য প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করছে।
এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশই সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, এ ধরনের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা এবং সহযোগিতার বিষয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে, ভারতীয় পুলিশ কর্মীর এই ঘটনা কূটনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
‘গেস্টাপো কায়দা’, PM-CM অপসারণের নতুন বিল ঘিরে লোকসভায় বিক্ষোভ বিরোধীদের
এই ঘটনার পর সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। বিজিবি এবং বিএসএফ উভয়ই সীমান্তে অবৈধ কার্যকলাপ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। পি জন সেলভারাজের মামলার পরবর্তী শুনানি এবং তদন্তের ফলাফল এই ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।