কাঁচা তুলো আমদানিতে শুল্ক মকুব, স্বস্তি পেল টেক্সটাইল শিল্প

নয়াদিল্লি: ভারতীয় টেক্সটাইল (Textile Industry) শিল্পকে ভরসা দিতে বড় সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। কাঁচা তুলো আমদানিতে বিদ্যমান ১১% শুল্ক আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মকুব করা হয়েছে।…

কাঁচা তুলো আমদানিতে শুল্ক মকুব, স্বস্তি পেল টেক্সটাইল শিল্প

নয়াদিল্লি: ভারতীয় টেক্সটাইল (Textile Industry) শিল্পকে ভরসা দিতে বড় সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। কাঁচা তুলো আমদানিতে বিদ্যমান ১১% শুল্ক আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মকুব করা হয়েছে। গত ১৯শে অগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া এই ছাড়ের ফলে তুলো আমদানিতে আর দিতে হবে না ৫% বেসিক কাস্টমস ডিউটি এবং ৫% কৃষি অবকাঠামো ও উন্নয়ন সেস। সোমবার রাতে প্রকাশিত গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, “জনস্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছিল।”

শুল্ক ছাড়ের মূল উদ্দেশ্য

   

সরকারি কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো—

কাঁচা তুলোর বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করা

চূড়ান্ত টেক্সটাইল পণ্যে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমানো

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলিকে (SMEs) সুরক্ষা দেওয়া, যাদের উপর দাম ওঠানামার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে

তুলোর দামের অস্থিরতা সামলানো না গেলে উৎসব মরসুমে টেক্সটাইল শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে, যা সরাসরি ভোক্তা বাজারে প্রভাব ফেলবে।

ভারতের টেক্সটাইল শিল্প কোটি কোটি মানুষকে কর্মসংস্থান দেয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় উৎস। কিন্তু বর্তমানে রপ্তানি বাজারে বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। শীঘ্রই মার্কিন বাজারে ভারতীয় পোশাক রপ্তানির উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করা হবে (২৫% বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার কারণে অতিরিক্ত ২৫% জরিমানা)। এর ফলে ভারতের রপ্তানি খাতে চাপ বাড়বে।

Advertisements

তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের উপর এই শুল্ক ২০%, ভিয়েতনামের উপর ২০% এবং চীনের উপর ৩০%। ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা স্পষ্টভাবে প্রতিযোগিতার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছেন।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারতের তুলো আমদানি গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগের বছরে যেখানে তুলো আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে গত অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয়েছে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ১০৭% বৃদ্ধি।

২০২২ সালে শুল্ক আরোপের পর থেকেই ভারতের তুলো আমদানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারি কমছে। আগে যেখানে ৪০-৫০% তুলো আমদানি হতো আমেরিকা থেকে, সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে তা নেমে আসবে মাত্র ১৯%-এ। ভারতীয় মিল মালিকরা এখন তুলনামূলক সস্তা ব্রাজিলিয়ান তুলো আমদানির দিকেই ঝুঁকছেন।

কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (CITI)-সহ একাধিক শিল্প সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে এই শুল্ক ছাড়ের দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের অভিযোগ ছিল, উচ্চ ইনপুট খরচের কারণে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে টক্কর দিতে পারছেন না।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)-এর প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “এই ছাড় তুলো মিলগুলিকে খরচের চাপে কিছুটা স্বস্তি দেবে। একই সঙ্গে উৎসব মরসুমে সুতো ও কাপড় রপ্তানিতেও সহায়ক হবে। তবে ছাড় মাত্র ৪০ দিনের জন্য সীমিত রাখা হয়েছে, যাতে তুলোর দামে ধারাবাহিকভাবে পতন না ঘটে এবং দেশীয় চাষিদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ না হয়।”

তুলো আমদানিতে অস্থায়ী শুল্ক ছাড় টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বড় স্বস্তি বয়ে এনেছে। সরকারের আশা, এর ফলে যেমন ভোক্তা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তেমনই রপ্তানি খাতও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে। তবে এই ছাড় সাময়িক, তাই আগামী কয়েক মাসে বাজার পরিস্থিতির উপরই নির্ভর করবে কেন্দ্রের পরবর্তী পদক্ষেপ।