নয়াদিল্লি: রাজধানীর কেন্দ্রস্থ দারিয়াগঞ্জে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। হঠাৎই একটি পুরনো ভবন ধসে (Building Collapse) পড়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত তিনজনের। দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তিনজন মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে। তবে আহতদের সংখ্যা স্পষ্ট নয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একাধিক মানুষ ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকতে পারেন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দীর্ঘদিনের অবহেলা এবং ভবনের বেহাল অবস্থা এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ। তবে ভবনের স্থায়িত্ব ও নির্মাণ সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখছে দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন।
বুধবার সকালে দারিয়াগঞ্জের একটি সরু গলির মধ্যে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড শব্দ হয়। মুহূর্তের মধ্যেই পুরো ভবন ভেঙে পড়ে যায়। ঘটনাস্থল মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়ে চিৎকার। স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ পুলিশ এবং দমকলকে খবর দেন। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় একাধিক দমকল ইঞ্জিন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দল। দীর্ঘ সময় ধরে চলে উদ্ধারকাজ। ধ্বংসস্তূপ থেকে এখন পর্যন্ত তিনজনের দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, অন্তত কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সূত্রের খবর, আহতদের মধ্যে একটি পরিবারের চারজন রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তাঁদের বাঁচাতে।
উল্লেখ্য, মাত্র এক মাস আগে, ১২ জুলাই দিল্লির ওয়েলকাম এলাকার জনতা কলোনিতে অননুমোদিত একটি চারতলা আবাসিক ভবন ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল একই পরিবারের ৬ সদস্যের। সেই ঘটনায়ও সরু গলি এবং উদ্ধারকার্যে দেরি বিপর্যয় বাড়িয়েছিল। এবারও দারিয়াগঞ্জে একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, রাজধানীতে অননুমোদিত এবং পুরনো ভবন নিয়ে প্রশাসনের উদাসীনতার।
দারিয়াগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহুদিন ধরেই এলাকার একাধিক পুরনো বাড়ি নিয়ে তাঁরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে এসেছেন। কিন্তু কোনওরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁদের মতে, যদি সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হত, তবে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ভবনের মালিক কে, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, ভবনটি বৈধ অনুমোদন নিয়ে নির্মিত হয়েছিল কি না এবং রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত নিয়ম মানা হয়েছিল কি না, সেটিও দেখা হচ্ছে।
দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন জানিয়েছে, রাজধানীর পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই জরাজীর্ণ বাড়ি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে তারা।
প্রতি বছরই রাজধানীতে পুরনো এবং অননুমোদিত বাড়ি ধসের ঘটনা সামনে আসে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটান। এই ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকাতে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নইলে আরও বহু পরিবারকে প্রাণ হারাতে হবে এভাবেই।